যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে ঘটে যাওয়া একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা, যেখানে একটি উড়োজাহাজ এবং সামরিক হেলিকপ্টারের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ৬৭ জন আরোহীর মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জো বাইডেন ও বারাক ওবামার প্রশাসনের কর্মী-বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি (ডিইআই) নীতিকে দায়ী করেছেন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর, তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মাঝ আকাশে আমেরিকান এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ এবং সেনাবাহিনীর ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষের কারণ উদ্ঘাটনে তাদের সময় লাগবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ড (এনটিএসবি) জানিয়েছে, উড়োজাহাজটির ককপিট ভয়েস রেকর্ডার এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার, যা সাধারণত ব্ল্যাক বক্স নামে পরিচিত, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সরকারি সংস্থাটি এএফপিকে জানিয়েছে, রেকর্ডারগুলো পর্যালোচনার জন্য তাদের গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিগ্যান ন্যাশনাল বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারে জনবল ছিল অপ্রতুল। ওই বিমানবন্দরেই উড়োজাহাজটি অবতরণ করার কথা ছিল, কিন্তু তার আগেই ঘটে যায় এই দুর্ঘটনা। কেন্দ্রীয় বিমান প্রশাসনের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারের জট সামলানোর জন্য নিয়ন্ত্রণকক্ষে সাধারণত দুজন নিয়ন্ত্রক থাকেন, কিন্তু ঘটনার দিন সেখানে ছিলেন মাত্র একজন।
উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারের সংঘর্ষের পর রাতের আকাশে একটি স্ফুলিঙ্গ দেখা যায়। সংঘর্ষের ফলে উড়োজাহাজ এবং হেলিকপ্টার বরফে ঢাকা পটোম্যাক নদীতে আছড়ে পড়ে, যা উদ্ধারকাজকে অন্ধকার ও ঠান্ডার মধ্যে আরও কঠিন করে তোলে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত ৩০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তবে উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারে থাকা ৬৭ জনের মধ্যে কেউ বেঁচে নেই বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, ট্রাম্প এই দুর্ঘটনার পর একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। তিনি বাইডেন ও ওবামার ডিইআই নীতির সমালোচনা করে বলেন, বিমান সংস্থাগুলোতে যোগ্য কর্মীদের আসতে দেওয়া হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, তারা একটি নির্দেশনা নিয়ে এসেছিলেন, যা ছিল ‘অত্যধিক শ্বেতাঙ্গ’। ট্রাম্প এরপর বলেন, “আমরা যোগ্য লোকদের চাই।”
উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন ট্রাম্প। এরপর তিনি বাইডেন প্রশাসনের পরিবহনবিষয়ক মন্ত্রী পিট বুটিগিগের দিকে ইঙ্গিত করে ডিইআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে কথা বলতে শুরু করেন। উল্লেখ্য, পিট বুটিগিগ একজন প্রকাশ্য সমকামী।
ট্রাম্প পরিবহন খাতে তার বৈচিত্র্য নীতির সমালোচনা করেন। একই সুরে কথা বলেন ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং নতুন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ। তারা বলেন, ডিইআই নীতির কারণে সক্ষম মার্কিনরা দায়িত্বশীল চাকরিতে পিছিয়ে পড়ছেন।
সাংবাদিকেরা আবারও প্রশ্ন করেন, এ দুর্ঘটনার জন্য কর্মক্ষেত্রে ডিইআই নীতি দায়ী কি না। ট্রাম্প উত্তরে বলেন, “এটি হতে পারে।”