ভারত ও পাকিস্তান—দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ। একাধিক যুদ্ধের ইতিহাস, সীমান্তে চলমান উত্তেজনা, এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের অস্থিরতা—এই সবই তাদের সম্পর্কের জটিলতা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই দুই দেশের প্রতি বিদ্বেষ ও প্রীতি একটি প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তবে, গত ১৬ বছরে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অতিমাত্রায় ভারতপ্রীতি এবং পাকিস্তান বিদ্বেষী মনোভাবের কারণে বাংলাদেশ বাণিজ্যের প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছে—এমন অভিযোগ শোনা যায়।
ক্ষমতার পালাবদলের পর, অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে বৈরিতার অতীত ভুলে নতুন সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যও বাড়ছে। অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বাণিজ্য আধিপত্যে কিছুটা হলেও লাগাম পড়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে ৩ কোটি ২১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৩ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করেছে, যার বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। পরবর্তী অর্থবছরে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানির পরিমাণ কমলেও বেড়েছে আমদানি মূল্য। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে ২ কোটি ৭১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৭০ মেট্রিক টন পণ্য আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আমদানি কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩০ মেট্রিক টনে, যার বিপরীতে পরিশোধ করতে হয়েছে ৬৬ হাজার ১৬০ কোটি টাকা।
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন মাত্রা দেখা যাচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে ১২ লাখ ৯৪ হাজার ৪৭ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করা হয়েছিল, যার মূল্য ছিল ৭ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৩১ হাজার ৬৯৭ মেট্রিক টনে, এবং এর বিপরীতে পরিশোধ করতে হয়েছে ৯ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১০ লাখ ৮১ হাজার ৯৬১ মেট্রিক টন।
ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে গড় আড়াই বছরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশের বাণিজ্যে কোনো দেশের সঙ্গেই অনুকূল অবস্থা নেই। দুটি দেশ থেকেই রপ্তানির তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ আমদানি করা হয়েছে। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নিরাপত্তার যুক্তিতে পাকিস্তান থেকে আমদানি করা বেশিরভাগ পণ্য ‘লাল তালিকাযুক্ত’ করা হয়েছিল। তবে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ হিসেবে ২৯ সেপ্টেম্বর ‘লাল তালিকামুক্ত’ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাকিস্তানি তুলা, সুতা ও কাপড়ের চাহিদা রয়েছে, এবং দেশটির শিশুখাদ্য, জুস, কাটলারি ও অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামেরও বড় বাজার রয়েছে।
ফতুল্লা অ্যাপারেলসের মালিক ফজলে শামীম এহসান বলেন, “আমরা ব্যবসায়ী। সব দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক ভালো। রাজনৈতিক ডামাডোলের বাইরে সবার সঙ্গে ব্যবসা করতে চাই।” বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী জানান, “পাকিস্তান থেকে মূলত হোম টেক্সটাইল ও ডেনিমের কাঁচামাল আসে। সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হলে সুতা আমদানির খরচ কমবে।”