রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে পুঁজিবাজারের চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত পনেরো বছর ধরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার চরম অনিয়ম, অপশাসন এবং অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে চলেছে। অসংখ্য প্রতিষ্ঠান নানা অনিয়মের কারণে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে, যার ফলে বাজার প্রকৃত অর্থে প্রায় ৪০ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের দুর্নীতির ঘটনাগুলো বাজারের জন্য একটি অন্ধকার অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং বাজারের সামগ্রিক অখণ্ডতার উপর স্থায়ী ক্ষত রেখে গেছে। এরপর ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারি এবং শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস আরোপের ফলে বাজার আরও ধ্বংসের মুখে পড়ে। আন্তর্জাতিক ফান্ড ম্যানেজাররা বাংলাদেশ থেকে সরে গেছেন, আর স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সঞ্চয় ও বিনিয়োগের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, তালিকাভুক্ত কোম্পানি, বাজার মধ্যস্থতাকারী এবং আর্থিক নিরীক্ষকদের মধ্যে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতির কারণে বাজারে আস্থার মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে। ডিবিএ সতর্ক করে দিয়েছে, যদি এই সংকট থেকে দ্রুত উত্তরণ না ঘটে, তাহলে পুঁজিবাজারকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং রাষ্ট্রের জন্য ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিবেশ তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ডিবিএ বেশ কিছু সুপারিশ পেশ করেছে। প্রথমত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ও অবকাঠামো খাতে অসংখ্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ রয়েছে, যেগুলো বাজারে তালিকাভুক্ত হলে মানসম্পন্ন স্টকের সরবরাহ বাড়বে এবং চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য ফিরে আসবে। এটি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং বাজারে তারল্য সংকট দূর করবে।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে সরাসরি তালিকাভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই কোম্পানিগুলো দেশের অবকাঠামো, আর্থিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকার যদি এই কোম্পানিগুলোতে তার অংশীদারিত্ব অফলোড করে, তাহলে তা পুঁজিবাজারের জন্য একটি বড় সুযোগ হয়ে দাঁড়াবে।
ডিবিএর চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে কম বাণিজ্যের পরিমাণ, বিনিয়োগযোগ্য স্টকের অভাব এবং সরবরাহের অসামঞ্জস্যতা বিদ্যমান। এই পরিস্থিতি অনুমানমূলক এবং ম্যানিপুলেটিভ কৌশলগুলোর জন্য উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উচ্চমানের আইপিও নিয়ে আসা এবং নতুন পণ্য ও কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা অপরিহার্য।
ডিবিএ আশা প্রকাশ করেছে যে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাদের এই আবেদনটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন এবং পুঁজিবাজারের সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এই পদক্ষেপ শুধু বাজারকে পুনরুজ্জীবিত করবে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।