আসন্ন ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটকে ‘খুবই বাস্তবমুখী’ হিসেবে অভিহিত করে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তার মূল লক্ষ্য হবে মূল্যস্ফীতি কমানো এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো।
বুধবার (১৯ মার্চ) বাজেট নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। বাজেট প্রণয়নের আগে সবার পরামর্শ নেওয়ার জন্য এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়, যা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সমাপনী বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, “বাজেটে আমাদের উদ্দেশ্য থাকবে একটি সমতাভিত্তিক এবং কল্যাণমুখী বাজেট প্রদান করা।” তিনি আরও জানান, “বাজেট হবে মধ্যমেয়াদি, কারণ দীর্ঘমেয়াদি বাজেট আমাদের ম্যান্ডেট নয়।”
“আমি কথাবার্তা কমই বলি, লম্বা বক্তৃতা আমি পছন্দ করি না। এবারের বাজেট স্পিচ ৫০ থেকে ৬০ পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে,”—এভাবে তিনি বাজেটের গঠন নিয়ে তার পরিকল্পনা তুলে ধরেন। “এবারের বাজেটটা বাস্তবমুখী হবে। মূল্যস্ফীতি কমবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে,”—এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বৈঠকে, কর পরিশোধে নাগরিকদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন কয়েকজন সাংবাদিক। তারা করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো এবং সারা দেশে করজালের বিস্তৃতি ঘটানোর পরামর্শ দেন।
উপদেষ্টা বলেন, “ক্যাশলেস সোসাইটি এবং ফেইসলেস ট্যাক্স সিস্টেম প্রয়োজন। আমি মনে করি, ট্যাক্স অফিসারদের মুখোমুখি হওয়া আপনাদের জন্য মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়। সামনাসামনি হলে টেবিলের নিচ দিয়ে লেনদেন হয়। অটোমেশন নিশ্চিত করার জন্য তথ্য প্রযুক্তির ওপরে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।”
অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার আলোচনার সংক্ষিপ্ত সার তুলে ধরে বলেন, “মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকারের একটি পদক্ষেপ।”
তিনি বলেন, “শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে কমছে, এটা বাড়ানোর বিষয়ে পরামর্শ এসেছে। অটোমেশন ও ক্যাশলেস সোসাইটির পরামর্শ এসেছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে যে পরামর্শটা এসেছে, সেটা হচ্ছে বাজেটের আকার ছোট হতে হবে, বাজেট হতে হবে বাস্তবধর্মী।”
সাংবাদিকদের চাহিদার প্রতি সাড়া দিয়ে যুগান্তর সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদার বলেন, “গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্তমান সরকার ভালো করছে। আগামী বাজেটও একটি চ্যালেঞ্জ। ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশকে জাগাতে হবে।”
ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আকার বাড়ানো এবং টিসিবির কাজের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “বাজেটের আকার বাস্তবমুখী হোক। মফস্বলে কর দেওয়ার মতো অনেক ব্যবসায়ী আছেন। তাদের করের আওতায় আনা যায় কিনা।”
ডিবিসি নিউজের সম্পাদক লোটন একরাম বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্বপ্ন আমরা দেখতে পাব বাজেটে। করমুক্ত আয়সীমা ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা করার দাবি করছি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ সহজলভ্য করা উচিত। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা করা উচিত।”
দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, “সামাজিক সুরক্ষার ভাতা বছর বছর সামান্য বাড়ে, এই ভাতাটা এমনভাবে বাড়াবেন, যাতে একজন মানুষ এক মাস চলতে পারে। সিপিডি থেকে তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।”
দৈনিক প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন বলেন, “গত ১৫ বছরে প্রবৃদ্ধি কাগজে কলমে হয়েছে, কিন্তু কর্মসংস্থান হয়নি। প্রতিবছর কত কর্মসংস্থান হচ্ছে তার একটা হিসাব চাই। ঢাউস বাজেট বক্তৃতার অবসান চাই। বাজেট বক্তৃতায় মন্ত্রণালয়ের যে বর্ণনা দেওয়া হয়, তা অহেতুক।