বিশ্বের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য এক নতুন হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে সাইবার জালিয়াতির বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক। জাতিসংঘের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। মাদক ও অপরাধ দমন বিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনওডিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে শুরু হওয়া এই সাইবার অপরাধ নেটওয়ার্ক এখন ক্যান্সারের মতো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও এই অপরাধ সিন্ডিকেটগুলো তাদের কার্যক্রম দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিয়েছে। এই নেটওয়ার্কে হাজার হাজার কর্মী নিযুক্ত রয়েছে, যাদের অধিকাংশই মানব পাচার ও জোরপূর্বক শ্রমের শিকার। ইউএনওডিসি’র আঞ্চলিক বিশ্লেষক জন ওজসিক এই পরিস্থিতিকে একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে তুলনা করে বলেছেন, “এটি ঠিক ক্যান্সারের মতো। আমরা যখন একটি জায়গায় এর চিকিৎসা করি, তখন এটি অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এর শিকড় এতটাই গভীরে যে তা সহজে চোখে পড়ে না।” বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সাইবার জালিয়াতি অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধের তুলনায় অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ এটি ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করে সহজেই লক্ষ লক্ষ সম্ভাব্য শিকারের কাছে পৌঁছাতে পারে। ২০২৩ সালে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত জালিয়াতিতে ৫৬০ কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ‘পিগ স্ক্যাম’ বা রোমান্স স্ক্যামের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। জাতিসংঘ এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বের সকল দেশকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে এই অপরাধ চক্রের অর্থায়ন বন্ধ করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই সমস্যার মোকাবেলা করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, এই সমস্যার সমাধান কেবল আঞ্চলিক প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন বিশ্বব্যাপী সমন্বিত উদ্যোগ।