ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটে যেন এক আলোকিত অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন বিরাট কোহলি। মাঠে তার ব্যাট যেমন বোলারদের জন্য দুর্বোধ্য ছিল, তেমনি তার অবসরের সিদ্ধান্তও এলো নিরব কিন্তু দৃঢ় এক বার্তার মতো। বিরাট কোহলি কেবল একজন ক্রিকেটারই নন, তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। তবে জীবনের এই পর্যায়ে এসে তিনি পরিবারকে সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। লন্ডনে নিজের বাড়িতে স্ত্রী আনুশকা শর্মা ও দুই সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানোই এখন তার কাছে বেশি মূল্যবান। ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যস্ততা তুলনামূলক কম হওয়ায় তিনি এই ফরম্যাটেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভারতের বর্তমান হেড কোচ গৌতম গম্ভিরের অধীনে দলের কাঠামোতেও এসেছে পরিবর্তন। গম্ভির চেয়েছেন একদল তারকাবর্জিত, সমানাধিকারভিত্তিক দল গঠন করতে। কোহলি-রোহিতদের মতো তারকারা এতদিন যা পেয়েছেন—ব্যক্তিগত সহায়ক, ভিন্ন যাতায়াত সুবিধা—তা আর থাকছে না। কোহলি হয়তো এমন কাঠামোয় নিজেকে মানিয়ে নিতে চাননি। কিংবা নিজের শর্তে, নিজের মানদণ্ডে বিদায় নেওয়ার সিদ্ধান্তই তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ফিটনেসে সবার জন্য আদর্শ উদাহরণ হলেও বয়সের প্রভাব এড়ানো সম্ভব নয়। কোহলির নিজের কথায়, ‘৩৭ বছর বয়সে বড় ইনিংস খেলা কঠিন।’ পাঁচ দিনের ক্রিকেটের ধকল আর আগের মতো নিতে পারছিলেন না তিনি। ম্যাচের পরে ক্লান্ত কোহলির শ্বাস নেওয়ার ভঙ্গি কিংবা বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তা তার নিজস্ব উচ্চমানের সঙ্গে খাপ খাচ্ছিল না। তাই আগেভাগেই সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। ক্যারিয়ারে ১২৩টি টেস্ট ম্যাচে ৪৬.৮৫ গড়ে ৯,২৩০ রান, ৩০টি শতক ও ৩১টি অর্ধশতকের মালিক কোহলি। তবে গত পাঁচ বছরে টেস্টে তার গড় ছিল মাত্র ২৬.৮৯। সেঞ্চুরির খরা, অফস্টাম্পের বাইরের বলে ধারাবাহিকভাবে আউট হওয়া—সব মিলিয়ে নিজের মানদণ্ডে তিনি যেন আর স্বচ্ছন্দে ছিলেন না। ইংল্যান্ড সফরে আরেকবার ব্যর্থ হলে হয়তো সম্মানজনক বিদায়টাও কঠিন হয়ে যেত। তাই তার আগেই পরিণত সিদ্ধান্তে টেস্ট অধ্যায় শেষ করলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর মাঠ থেকেই এই ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন কোহলি। তার কিছুদিন পর একই ঘোষণা দেন রোহিত শর্মা। এবার টেস্ট ক্রিকেটেও রোহিতের বিদায়ের পরপরই কোহলির অবসরের ঘোষণা এলো। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ও সমান্তরাল ক্যারিয়ার থাকা এই দুই তারকার পথচলা যেন একই সুরে শেষ হলো। রোহিতের অনুপস্থিতিতে টেস্ট দলে কোহলি হয়তো নিজেকে কিছুটা একাকী মনে করেছেন, যা তার সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে। বিদায়বেলায় কোহলি লিখেছেন, ‘আমি টেস্ট ক্রিকেটকে সবকিছু দিয়েছি, আর এই ক্রিকেট আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশি।’ ১৪ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টেনে বিরাট কোহলি রেখে গেলেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তার বিদায় ভারতীয় ক্রিকেটে এক যুগের সমাপ্তি ঘটালেও, তার অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।