অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী এনে রাজনৈতিক দল ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান চালু করা হয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপকে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এই সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী ও ঐতিহাসিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে, এই সিদ্ধান্তে জনগণের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতিফলন ঘটেছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলমান বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম স্থগিত রাখার এই সিদ্ধান্তকে তারা ন্যায়বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন নজির অনুসরণ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার মতে, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত দলগুলোর বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রহণ করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতা ডা. শফিকুর রহমান এই সিদ্ধান্তকে জনগণের বিজয় হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে তার মতে, এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি শহীদ পরিবারগুলোর দাবির কথা উল্লেখ করে বলেন, তারা আর্থিক সহায়তার চেয়ে ন্যায়বিচারকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল। তার মতে, জনগণকে দীর্ঘদিন আন্দোলন করতে হয়েছে এই দাবি বাস্তবায়নের জন্য। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের পথ সুগম হবে। সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে। তার মতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার কথাও জানান তিনি। বিভিন্ন ছোট দল ও রাজনৈতিক সংগঠনও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, এবি পার্টিসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতারা মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। তারা আশা প্রকাশ করেন যে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশে ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের পূর্ণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। তবে এর সফল বাস্তবায়নই নির্ধারণ করবে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ। সাধারণ মানুষ এখন ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতার আশায় সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।