বিদেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার কমেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবে ব্যয় বেড়েছে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের হার সাম্প্রতিক সময়ে কমেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং সৌদি আরবে এই খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশিরা বিদেশে ৩৬১ কোটি টাকা খরচ করেছেন, যা ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৬.২৫% কম। গত বছরের একই সময়ে এই খরচ ছিল ৫০৩ কোটি টাকা, অর্থাৎ এক বছরে ১৪২ কোটি টাকার পার্থক্য দেখা গেছে। বিশেষ করে ভারতের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড লেনদেন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। মার্চ মাসে ভারতে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড লেনদেন ছিল মাত্র ২৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১০৬ কোটি টাকা। এই হ্রাসের হার ৭২.২৬%। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভিসা জটিলতা, সীমান্ত পারাপারে কড়াকড়ি এবং অন্যান্য দেশে ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি এই পরিবর্তনের মূল কারণ। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং সৌদি আরবে ক্রেডিট কার্ডে ব্যয় বেড়েছে। মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৫৭ কোটি ৪০ লাখ, যুক্তরাজ্যে ৩৬ কোটি এবং সৌদি আরবে ৩৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চশিক্ষা, চিকিৎসা, প্রবাসী সংযোগ এবং হজ-ভ্রমণের চাহিদা এই ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রেখেছে। থাইল্যান্ডেও বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে সেখানে খরচ ছিল ৪৬ কোটি টাকা, যা মার্চে নেমে এসেছে ২২ কোটি টাকায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, একসময় বাংলাদেশিরা ভারতে বেশি ভ্রমণ করতেন, তবে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে তাদের খরচের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি এটিকে স্বাভাবিক পরিবর্তন হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের হারও বেড়েছে। ভারতের সাথে কূটনৈতিক টানাপড়েনও এই পরিবর্তনের একটি বড় কারণ। গত বছর আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে ভারত বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটক ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা জানিয়েছেন, জরুরি প্রয়োজনে ভিসা প্রদান করা হলেও পর্যটক ভিসা এখনও বন্ধ রয়েছে। এদিকে, দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে এই খাতে ২৬.৫২% বৃদ্ধি পেয়ে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩,৭৫৫ কোটি টাকায়। দেশীয় খাতে ক্রেডিট কার্ড সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, খুচরা কেনাকাটা এবং পরিষেবা বিল পরিশোধে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বৈশ্বিক ভ্রমণ প্রবণতা এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কার্যক্রমের পরিবর্তন এই ব্যবহারের ধরনে প্রভাব ফেলছে।