ঢাকা সেনানিবাসে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তার সাম্প্রতিক বক্তব্যে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, দেশের মধ্যে এক অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যা সময়ের সঙ্গে আরও খারাপ হচ্ছে। বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বেসামরিক প্রশাসন কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে না, আর সশস্ত্র বাহিনী একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করছে। সেনাপ্রধান বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে সেনাবাহিনী ও তার নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। তিনি উল্লেখ করেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করছে, যাতে তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা যায়। এই অবস্থায়, সেনাবাহিনী দেশের শান্তি এবং স্থিতিশীলতা রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে, এবং কোনো ধরনের ক্ষতি যাতে না হয়, তার জন্য তারা সতর্ক রয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন নিয়ে সেনাপ্রধানের মন্তব্য ছিলও সরাসরি। তিনি জানান, জাতিসংঘ কর্তৃক প্রস্তুত করা প্রতিবেদনটি সেনাবাহিনীর মতামত ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে এবং জাতিসংঘের সঙ্গে যোগাযোগের সময় জানা গেছে যে, বর্তমান সরকার জাতিসংঘকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়নি। এতে দেশের সংস্কার বিষয়ে সরকারের অসহযোগিতা এবং সেনাবাহিনীর হতাশা ব্যক্ত হয়েছে। সেনাপ্রধান আরো জানান, মানবিক করিডর এবং চট্টগ্রাম বন্দর বিষয়ে বর্তমান সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই। তার মতে, শুধু একটি নির্বাচিত সরকারই যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেনাপ্রধান স্পষ্টভাবে বলেন, “দেয়ার উইল বি নো করিডর” এবং বর্তমান সরকারের পক্ষে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই। দেশের অর্থনীতি এবং শিল্পকারখানার অবস্থা নিয়েও সেনাপ্রধান দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, একের পর এক গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং এই বিষয়ে সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এসময়, তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পুনর্ব্যক্ত করেন যে, তারা দেশ ও জনগণের কোনো ক্ষতি করবে না এবং কাউকে এমন কাজ করতে দেবে না। সেনাপ্রধান জানান, প্রায় নয় মাস ধরে সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে তিনি রাজনৈতিক সরকারের অভাব অনুভব করছেন এবং একটি নির্বাচিত সরকারের জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন। তিনি আরও বলেন, একটি নির্বাচিত সরকার সেনাবাহিনীর জন্য অভিভাবক হিসেবে কাজ করবে এবং দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করবে। সেনাপ্রধান মনে করেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত এবং দেশের ভবিষ্যৎ পথনির্দেশের অধিকার নির্বাচিত সরকারেরই। এছাড়া, সেনাপ্রধান স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, যত দ্রুত সম্ভব একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত এবং নির্বাচনের পর সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এটি না হলে, দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঝুঁকিতে পড়বে, বিশেষত প্রতিবেশী অঞ্চলের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে। সবশেষে, সেনাপ্রধান তার কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান, তাঁরা যেন সর্বোচ্চ কর্তব্যপরায়ণতা ও আনুগত্যের সাথে কাজ করেন এবং দেশের প্রতিরক্ষা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, “নিজ অবস্থান ও আদর্শে অবিচল থাকলে কোনো মহলই সেনাবাহিনী ও দেশের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”