বাংলাদেশে অর্থপাচারের ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ নেতাকর্মীরা এই পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বিশেষ করে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও বিপর্যস্ত হয়েছে এবং সন্দেহজনক লেনদেনের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সাড়ে দশ মাসে ২৭ হাজার ১৩০টি সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট (এসটিআর) পাওয়া গেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭৯ শতাংশ বেশি। শুধুমাত্র এই বছরেই এসটিআর এর সংখ্যা আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বিএফআইইউ জানাচ্ছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই রিপোর্টিংয়ের হার কয়েক গুণ বেড়ে গেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক সংকটের আরো একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানাচ্ছেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রায় ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার সমান। এই অর্থ পাচার করার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে, এমনকি একজন ব্যক্তি ৩৫০টি বাড়ি কেনার মতো ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, “পাচারের অর্থ ফেরত আনতে হলে অনেক সময় লাগবে, তবে আমরা চেষ্টা করছি সব ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে আনার।” এদিকে, বিএফআইইউ এই কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা নিচ্ছে। অর্থ ফেরত আনার জন্য ১১টি গ্রুপ নিয়ে যৌথ তদন্ত চলছে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, তদন্তকারী সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে। এই অর্থপাচার এবং হুন্ডি ব্যবসা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিএফআইইউ প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম বলেছেন, “অর্থপাচার ও হুন্ডি বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, যা দেশের আর্থিক সিস্টেমের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।” তবে, এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনায় নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউ যৌথভাবে পাচারের অর্থ ফেরত আনার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি এবং জটিল প্রক্রিয়া। পৃথিবীজুড়ে অর্থপাচারকারী ব্যক্তিদের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে এবং আরও সম্পদ জব্দ করা হবে, এমনটা আশা করা হচ্ছে।