চীনের বাণিজ্য মন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। বৈঠকে, বাংলাদেশের কৃষি খাতে ড্রোন প্রযুক্তির সহায়তা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা কৃষি উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেখ বশিরউদ্দীন চীনের আধুনিক প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতার সাহায্য নিয়ে কৃষি খাতে বিপুল উন্নতির আশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসলের সঠিক নিরীক্ষণ, কীটনাশক ছিটানো, সার ও বীজ বপনের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা সম্ভব। তিনি চীনের সঙ্গে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি খাতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও এর আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, চীন বাংলাদেশকে স্মার্ট কৃষি ও ড্রোন প্রযুক্তি সংক্রান্ত সাহায্য দিতে প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও, শেখ বশিরউদ্দীন বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক ফিশিং জাহাজের অভাবের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই খাতে যথাযথ সহায়তার অভাব থাকায় সমুদ্র সম্পদের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। চীনের সহযোগিতায় সমুদ্র মৎস্য খাতের উন্নয়ন ও মাছ ধরা ও প্রক্রিয়াকরণের প্রযুক্তি বৃদ্ধি হলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বাড়বে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক সুবিধা তুলে ধরে তিনি চীনা উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন এ দেশে বিনিয়োগ করার জন্য, কারণ এখানে দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায় এবং সাশ্রয়ী মূল্যে কাজ করা সম্ভব। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে যেমন চামড়া, হালকা প্রকৌশল, এগ্রি মেশিনারি, ফুড প্রসেসিং ও ঔষধ শিল্পে উন্নতি হতে পারে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তির পর দু’দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক এক নতুন মাত্রা লাভ করেছে। তিনি বাংলাদেশের মৎস্য খাত ও সমুদ্রসম্পদ আহরণের জন্য চীনের সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছেন। এই বৈঠকে আরও আলোচনা হয় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে। পরবর্তী সময়ে চীন-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। এছাড়া, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এবং ই-কমার্স বিষয়ে সহযোগিতার জন্য দু’টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ প্রতিনিধির পক্ষে শেখ বশিরউদ্দীন এবং চীনের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও এই সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। এই বৈঠকটি ছিল চীনের বাণিজ্য মন্ত্রীর বাংলাদেশের তিন দিনের সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দুই দেশের বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।