বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর প্রভাবশালীদের মধ্যে দেশ ত্যাগের প্রবণতা বেড়েছে। সাবেক এমপি, মন্ত্রী এবং নেতাদের অনেকেই বিদেশে বাড়ি, গাড়ি ও সম্পদ কিনছেন। তারা অবৈধ সম্পদ বিক্রি করে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ স্থানান্তর করছেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি ব্যক্তিদের আমানতের পরিমাণ গত এক বছরে ৩৩ গুণ বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালে যেখানে এই অঙ্ক ছিল ১৮ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ, ২০২৪ সালে তা ৫৮৯.৫৪ মিলিয়ন ফ্রাঁতে পৌঁছেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ক্ষমতার পালাবদলের সুযোগের কারণে বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের প্রবণতা বেড়েছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন উল্লেখ করেছেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে বিনিয়োগ না হলে তা উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজে লাগবে না। তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আইনিভাবে প্রমাণ করতে হবে, যা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজও একই মত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, সুইজ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি আমানতের উল্লম্ফন উদ্বেগজনক। বিশেষ করে, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় অর্থ পাচারের প্রবণতা বেড়ে যায়।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র কমিটি জানিয়েছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। পাচারকারীদের পছন্দের দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশ থেকে ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সরকার কাজ করছে, তবে এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া।
বিদেশে অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে ‘লেয়ারিং’ একটি বড় বাধা। অর্থাৎ, বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে এবং পরে নিরাপদ দেশে টাকা পাচার করা হয়েছে, যা প্রমাণ করা কঠিন।
অর্থপাচার রোধে সরকারের উদ্যোগ হিসেবে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তবে, এখনও এক টাকাও ফেরত আসেনি। সাবেক জেলা জজ মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, বিদেশ থেকে পাচার করা সম্পদ ফেরত আনতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।
এ পরিস্থিতিতে, দেশের অর্থনীতির জন্য এই অর্থপাচার একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে, তবে তা একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া।