জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। তারা মনে করছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত জরুরি, এবং নির্বাচিত সরকারই বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সময়সূচি নিয়ে ধোঁয়াশা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণার মাধ্যমে তা অনেকটাই কেটে গেছে। মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা জানান, আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ঘোষণার ফলে ব্যবসায়ীরা নতুন করে তাদের পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, নির্বাচনের তারিখ জানা থাকলে উদ্যোক্তাদের জন্য কিছুটা সুবিধা হয়, যা বিনিয়োগে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের প্রতি ব্যবসায়ীদের অনেক আশা ছিল, কিন্তু তারা আস্থায় নেয়নি। নির্বাচনের ঘোষণা ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে, কারণ নির্বাচিত সরকার দীর্ঘমেয়াদি নীতি গ্রহণ করতে পারে, যা ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের প্রশাসক সচিব মো. হাফিজুর রহমান জানান, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দ্বিধা তৈরি করছিল, কিন্তু নির্বাচনের সময় ঘোষণার মাধ্যমে তা অনেকটাই কেটে গেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, একটি অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশকে আরো সুসংহত করবে। বিশ্ব অর্থনীতি বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে, তাই দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। ব্যবসায়ীসমাজ একটি নির্বাচিত সরকার গঠনের জন্য অপেক্ষা করছে, যারা স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও স্থিতিশীলতার মাধ্যমে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য প্রতিনিধি জানান, নির্বাচনের সময় ঘোষণার ফলে তাদের সদস্য কোম্পানিগুলো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে পারবে, যা বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নের জন্য একটি ভালো বার্তা। অ্যামচেমের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, নির্বাচনের সময় ঘোষণায় ব্যবসা-বিনিয়োগের আস্থা বাড়বে, তবে বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির অপেক্ষায় থাকবেন। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন, যাতে বাজার ও ব্যবসায়িক খাতে যে গতি এসেছে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সরকারের এই ঘোষণার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সংকেত দেওয়া হয়েছে, যা বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনবে। তবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও পরবর্তী কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘোষণা একটি আশাব্যঞ্জক সূচনা হলেও প্রকৃত আস্থা ফিরে আসবে তখনই, যখন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত হবে। বিনিয়োগকারীরা শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, বরং তা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কতখানি তাও বিবেচনায় রাখবেন। রাজনৈতিক সংঘাত বা সহিংসতা বেড়ে গেলে ঘোষণার ইতিবাচক প্রভাব ক্ষীণ হয়ে যাবে।