কলকাতার আরজি কর ইস্যুতে ন্যায় বিচারের আশায় ৫ দফা দাবিতে অনড় চিকিৎসক পড়ুয়ারা, বৃহস্পতিবার দফায় দফায় ইমেইল চালাচালি হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্রদের ঘোষিত শর্ত না মানায় বৈঠক ভেস্তে যায়। পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতজুড়ে একটানা ৩৫ দিন ধরে চলা ছাত্র আন্দোলনের সমাধানের দোরগোড়ায় এসেও আরজি কর ইস্যুতে খুললো না জট।
চিকিৎসকদের একাধিক দাবি-দাওয়া প্রথমে মানতে না চাইলেও পরবর্তীকালে মেনে নিয়েই আলোচনায় রাজি হয় রাজ্য। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজ্যের সঙ্গে চিকিৎসকদের এই আলোচনার দিকে তাকিয়ে ছিল গোটাদেশের মানুষ। নির্দিষ্ট পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আলোচনার উদ্দেশে সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের কিছু পরেই নবান্নে পৌঁছে যান জুনিয়র চিকিৎসকেরা। কিন্তু বৈঠকের লাইভ সম্প্রচার হবে না জেনে সভাঘরের বাইরেই অবস্থান নেন তারা।
জুনিয়র ডাক্তাররা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, লাইভ স্ট্রিমিং ছাড়া কোনও আলোচনা হবে না। চিকিৎসকদের অনড় অবস্থানের কারনে প্রায় দুই ঘণ্টা সভা ঘরে থাকার পরে বৈঠক বাতিল করে নিজের কার্যালয় ১৪ তলায় ফিরে যান মমতা। এরপর আবার সভাঘরে ফিরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।
ফিরে এসে ক্ষিপ্ত মমতা বলেন, ৩ দিন অপেক্ষা করলাম। তারা এলেন না। আজও ২ ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করেছি। আমার সঙ্গে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি ও প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ছিলেন। তারা এসে সভাঘরে ঢুকলেনই না। কেন ঢুকলেন না জানি না। তাও আমরা কোনও ব্যবস্থা নেব না। ছোট ভাইবোনেদের ক্ষমা করে দেব। ওরা ছোট, বড়দের উচিত ছোটদের ক্ষমা করে দেয়া। আমরাও ক্ষমা করে দেব।
মমতা বলেন, আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে। অনেক ভুল বোঝাবুঝি, কুৎসা হয়েছে। সাধারণ মানুষ রঙ বোঝেনি। আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি। কিন্তু আশা করি, মানুষ বুঝেছে, ওরা বিচার চায় না। চেয়ার চায়।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরাসরি সম্প্রচারে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু এই মামলা যেহেতু সুপ্রিম কোর্টে চলছে, তাই আমরা এমন কিছু করতে চাইনি, যাতে অচলাবস্থা চলতে পারে। চিঠিতে আমরা লিখেছিলাম, সরাসরি সম্প্রচার করতে পারব না। এসময় রাজ্যের আমজনতার উদ্দেশেও হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার কথায়, তিন দিনেও সমাধান করতে পারলাম না। বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। কথা বললেই সমস্যার সমাধান হয়। জেদাজেদি করবেন না। এত মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। আমার হৃদয় কাঁদছে। ২৭ জন মারা গিয়েছেন। ৭ লক্ষ মানুষ চিকিৎসা পাননি। ডাক্তারেরা ভগবান। কিন্তু আমার হৃদয় কাঁদছে।
এদিকে এদিন নবান্নের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার জন্য প্রশাসনিক ব্যর্থতাকেই দায়ী করলেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে অর্ণব মুখোপাধ্যায় বলেন স্বচ্ছতার কারণেই আমরা লাইভ টেলিকাস্টের দাবি জানিয়েছিলাম কিন্তু কী অসুবিধা তা প্রশাসনের তরফে স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। শুনলাম, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, উনি চেয়ার ছেড়ে দিতে রাজি আছেন। এটা শুনে আমরা হতাশ হয়েছি। কারণ চেয়ারের জন্য কোনও আলোচনা করতে আসিনি। আমরা এসেছিলাম ন্যায় বিচারের দাবিতে।
আন্দোলনকারীরা জানান আমরা খোলা মনেই আলোচনা করার জন্য নবান্নে এসেছিলাম। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন দু ঘন্টা ধরে এ কথা প্রশাসনের তরফে আমাদের জানানো হয়নি। তবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে বলে এখনো আশাবাদী আন্দোলনকারীর।
/এটিএম