জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হলো কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২১টি আবাসিক হলে ভোটগ্রহণ চলে। মোট ১১ হাজার ৮৯৭ জন ভোটারের মধ্যে ৭ হাজার ৯৩৪ জন শিক্ষার্থী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন, যা মোট ভোটের প্রায় ৬৭ শতাংশ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে সর্বোচ্চ ৮২ শতাংশ ভোট পড়েছে, আর নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে সর্বনিম্ন ৪৮ শতাংশ। ভোটগ্রহণ শেষে রাত সোয়া ১০টায় শুরু হয় ভোট গণনা, যা আজ সকালে ফলাফল ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হওয়ার কথা। ফলের অপেক্ষায় সিনেট ভবন ও আশপাশের এলাকায় শিক্ষার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে মনিটরের মাধ্যমে ভোট গণনার দৃশ্য দেখানো হয়, যেখানে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল। তবে এই নির্বাচন ঘিরে দেখা গেছে চরম অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা। ভোট গ্রহণের সময় পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে না দেওয়া, প্রার্থীদের কেন্দ্র পরিদর্শনে বাধা, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন, জাল ভোট, অমোচনীয় কালি ছাড়া ভোট গ্রহণ, বুথ সংকট, ভোটার তালিকায় ছবি না থাকা—এসব অভিযোগে ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রার্থীরা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ওঠে একের পর এক অভিযোগ। এইসব অনিয়মের প্রতিবাদে ছাত্রদলসহ পাঁচটি প্যানেল ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে থাকা বিএনপিপন্থি তিন শিক্ষকও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। ভোট বর্জনকারী প্যানেলগুলো পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানায়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয় ১ হাজার ৫০০ পুলিশ, সাত প্লাটুন বিজিবি ও পাঁচ প্লাটুন আনসার। জয় বাংলা গেট ও মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন গেট ছাড়া সব প্রবেশপথ বন্ধ রাখা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নেয়। নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ছাত্রদল রাত সোয়া ৯টায় বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি নতুন কলাভবন থেকে শুরু হয়ে পরিবহন চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। ‘প্রহসনের জাকসু, বয়কট বয়কট’ স্লোগানে মুখরিত হয় ক্যাম্পাস। ব্যালট পেপার ও ভোট গণনার ওএমআর মেশিনের উৎস নিয়েও বিতর্ক দেখা দেয়। ছাত্রদল অভিযোগ করে, এগুলো জামায়াতঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেনা হয়েছে। পাল্টা জবাবে শিবির সমর্থিত প্যানেল জানায়, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিএনপি-সমর্থিত। এইচআরসফট বিডি কোম্পানির প্রধান রনির ফেসবুক প্রোফাইলে বিএনপি নেতাদের ছবি থাকার তথ্য তুলে ধরেন তারা। এই নির্বাচন যেমন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত ছিল, তেমনি বিতর্ক, অভিযোগ ও বর্জনের কারণে প্রশ্নবিদ্ধও হয়েছে। ফলাফল ঘোষণার পর হয়তো আরও নতুন মাত্রা যোগ হবে এই বিতর্কে।