রিপোর্ট: রপ্তানির আড়ালে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা (৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিদেশে পাচারের অভিযোগে আলোচিত বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১৭টি মানিলন্ডারিং মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রোববার রাজধানীর মালিবাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ছিগবাত উল্লাহ। তিনি জানান, সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের তদন্তে প্রমাণ মিলেছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ১৭টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক বাণিজ্যের নামে বড় অংকের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। তদন্তে উঠে আসে, এসব প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে এলসি খুলে রপ্তানির কাগজপত্র দেখালেও দেশের আয় হিসেবে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা ফেরত আনেনি। বরং, সংশ্লিষ্ট অর্থ দুবাইভিত্তিক ‘আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং লিমিটেড’-এর মাধ্যমে আমিরাত, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আয়ারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য, আর আর গ্লোবাল ট্রেডিংয়ের মালিকানা রয়েছে সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং এএসএফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ৯৬ লাখ ৯৬ হাজার ৬৮০ মার্কিন ডলার রপ্তানি দেখানো হলেও, এর বিপরীতে কোনো অর্থ দেশে ফেরত আসেনি বলে সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর মতিঝিল থানায় ১৭টি মামলা দায়ের করে সিআইডি। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন চাওয়া হলে সেটি সম্প্রতি অনুমোদন লাভ করে। আদালতের নির্দেশে আসামিদের ঢাকার দোহার উপজেলায় প্রায় ২ হাজার শতক জমি ও স্থাপনা, গুলশানের দ্য এনভয় বিল্ডিংয়ের ৬ হাজার ১৮৯.৫৪ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং গুলশান ৬৮/এ, রোড ৩১-এর ২ হাজার ৭১৩ বর্গফুটের ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট ক্রোক করেছে সিআইডি। এসব সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা বলে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে আসামিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ এবং বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। মামলাগুলোয় বেক্সিমকো চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, আহমেদ শাহরিয়ার রহমানসহ ২৮ জন ব্যক্তি ও ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে আসামি করা হয়েছে। এ বছরের জানুয়ারিতে অটোম্যান লুপ অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসিউর রহমানকে গ্রেফতার করে সিআইডি। বর্তমানে কারাগারে থাকা সালমান এফ রহমানকেও এ মামলাগুলোয় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট জানায়, ট্রেড-বেইজড মানিলন্ডারিংয়ের এই জটিল তদন্ত দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে রাষ্ট্রের আর্থিক স্বার্থ রক্ষায় তারা নিরলসভাবে কাজ করছে।