বাংলাদেশ ব্যাংক তার মতিঝিল অফিসে দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা পাঁচ ধরনের গ্রাহকসেবা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। ৩০ নভেম্বর থেকে শুরু করে প্রাথমিকভাবে মতিঝিল অফিসে এসব সেবা বন্ধ করা হবে এবং পরে ধাপে ধাপে দেশের অন্যান্য বিভাগীয় অফিসেও এই কার্যক্রম স্থগিত করা হবে। বন্ধ করা সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে ছেঁড়া-ফাটা নোট বদল, সঞ্চয়পত্র বিক্রি, প্রাইজবন্ড বিক্রি, সরকারি ট্রেজারি চালান গ্রহণ এবং চালানভিত্তিক ভাংতি টাকা প্রদান। এছাড়া ডিসেম্বর থেকে মতিঝিল অফিসে নগদ সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড কেনাবেচাও বন্ধ থাকবে। যদিও কিছু সেবা মতিঝিল অফিসের নির্দিষ্ট কাউন্টারে সীমিত আকারে চলবে, যেমন ধাতব মুদ্রা বিনিময়, স্মারক মুদ্রা বিক্রি, অপ্রচলিত নোটের বিরোধ নিষ্পত্তি এবং ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন সম্পর্কিত সেবা। তবে ভবিষ্যতে এই সেবাগুলোরও ধীরে ধীরে বন্ধের পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যিক ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও পোস্ট অফিসে আগের মতো সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড ও নোট বদলের সেবা অব্যাহত থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলো যেন নির্বিঘ্নে এসব সেবা দিতে পারে, সেজন্য তদারকি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। ব্যাংকের এই পদক্ষেপের মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে ক্যাশ বিভাগ আধুনিকায়ন, মূল ভবনের নিরাপত্তা জোরদারকরণ এবং স্বয়ংক্রিয় ভল্ট স্থাপনের প্রয়োজন। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সুপারিশেই এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। সম্প্রতি মতিঝিল অফিসে সঞ্চয়পত্র সার্ভার জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসলেও, কর্মকর্তারা বলছেন সেবাবন্ধের কারণ মূলত নিরাপত্তা নীতিমালা ও আধুনিকায়ন। গ্রাহকদের বিভ্রান্তি এড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগিরই ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে সেবা বন্ধের তথ্য জানাবে। বর্তমানে মতিঝিল অফিসে সঞ্চয়পত্র সেবার শতকরা ৩০ ভাগ গ্রাহকসেবা দেওয়া হয়, যা বন্ধ হলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ বাড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশ ব্যাংকের আধুনিকীকরণ ও সেবা নিরাপত্তা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আর্থিক সেবা প্রদান ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও নিরাপদ করার লক্ষ্য নিয়ে নেওয়া হয়েছে।