মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ক্ষমতার অবস্থান যাই হোক, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয় : ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হলো রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনকে ভোটের পথে বাধা দিতে পারবে না কোনো অপশক্তি : আইজিপি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট : জাতির উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা রবিবার আরও ১২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন ইসির ১২ কর্মকর্তাকে বদলি রাজধানীর মেরুল বাড্ডা ও শাহজাদপুরে রাতের আঁধারে দুটি বাসে অগ্নিসংযোগ, আতঙ্কে স্থানীয়রা জাতীয় নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল: ১৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ নিবন্ধনের দাবিতে আমরণ অনশনে তারেক রহমান, ‘নিয়মের বাইরে কিছুই সম্ভব নয়’— ইসি

যে আলোচনা হয়েছে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তা রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ: হাসনাত আবদুল্লাহ

bornomalanews
  • Update Time : শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫
  • ১৫৯ Time View

সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আলোচনা নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এটিকে রাজনীতিতে অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এই প্রসঙ্গে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, রাজনীতি কেবলমাত্র রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত। তার এই মন্তব্য এসেছে ২১ মার্চ, শুক্রবার রাতে রাজধানীর বাংলামটরে রূপায়ণ টাওয়ারে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে। সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, যা দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন একটি প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন। এরপর এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহর কথাই সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়। সেনাপ্রধানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের প্রকৃতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে আবদুল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের যে আলোচনা হয়েছে, আমরা মনে করি সেটা চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের শামিল। রাজনীতি রাজনীতিবিদদের দ্বারাই পরিচালিত হওয়া উচিত। ভবিষ্যত রাজনীতির দিকনির্দেশনা রাজনৈতিক নেতাদের হাতেই থাকা উচিত। গত বৃহস্পতিবার আমি এই অবস্থানেই ছিলাম।”

আবদুল্লাহ এই বৈঠকের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক নানা পর্যায়ে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। তবে ১১ তারিখের বৈঠকটি ছিল ভিন্ন মাত্রার, কারণ সেখানে অপর পক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “আমি এই বিষয়ে আমার অবস্থান স্পষ্ট করেছি। সেখানে সবকিছুই উপস্থাপন করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য আমাদের আহ্বান জানানো হয়েছিল।” তার বক্তব্যে স্পষ্টই প্রতিফলিত হয়েছিল রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা নিয়ে তার গভীর উদ্বেগ।

এনসিপি নেতা সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যেরও উল্লেখ করেন, যা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধানকে যেভাবে সম্বোধন করা হয়েছে, যেভাবে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, এবং আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনার কথা বলা হয়েছে—এসব কিছুই রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অসমীচীন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে,” বলেন আবদুল্লাহ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তার দল এই বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকাকে খর্ব করার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে তারা দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে করেন কিনা—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ একটু দৃঢ়তাই ফুটে উঠল তার কণ্ঠে। “আমাদের সংগ্রাম চলমান,” তিনি বলেন। “যতদিন ছাত্র, নাগরিক ও ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকবে, ততদিন আমি নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে করি না।” তার এই কথায় প্রতিফলিত হয় এনসিপির সংকল্প, যারা কর্তৃত্ববাদী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

সাংবাদিকরা আরও জানতে চান সেনাবাহিনীর বক্তব্যের স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং আলোচনার বিস্তারিত বিবরণ। তবে আবদুল্লাহ এই প্রসঙ্গে কিছুটা সংযত থাকেন। “আমার সরাসরি বক্তব্য আছে,” তিনি বলেন। “আমাদের আলোচনা, উপরের দিক থেকে কী এসেছে, এবং আমরা কী উপস্থাপন করেছি—সবকিছুই স্পষ্ট। আমরা বলেছি, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ গণহত্যার দায় স্বীকার করেনি। আমরা জোর দিয়ে বলছি, আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তাদের অপরাধ স্বীকার করতে হবে। এর পরই কেবল আরও আলোচনা হতে পারে। এর আগে কোনো আলোচনা সম্ভব নয়। এটা একেবারেই অচিন্তনীয়।”

৫ আগস্টের পর বারবার আওয়ামী লীগের নাম উচ্চারণের সমালোচনা করে আবদুল্লাহর বক্তব্য আরও তীব্র হয়। “৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের নাম, ব্র্যান্ড ও আদর্শ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে,” তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেন। তিনি বিদেশি বা দেশীয় কোনো ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনাও নাকচ করে দেন এবং বলেন, এনসিপি কোনো বিদেশি বা স্থানীয় এজেন্সির সঙ্গে জড়িত নয়। “যদি কোনো ষড়যন্ত্র হয়, তা স্থানীয় হোক বা বিদেশি, আমরা কোনো ধরনের শক্তির সঙ্গে জড়িত নই,” তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান।

এই সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির অবস্থান স্পষ্ট হয়েছিল—রাজনৈতিক প্রক্রিয়া কেবলমাত্র রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত, এবং এই নীতির ব্যত্যয় ঘটানো হলে তা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করে দেবে। আবদুল্লাহর বক্তব্যে জটিলতা ও বাক্যের বৈচিত্র্য ফুটে উঠেছিল, যা রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতা ও উচ্চমাত্রার তাৎপর্যকে প্রতিফলিত করে। তার বিশদ ব্যাখ্যা ও সংক্ষিপ্ত, প্রভাবশালী বক্তব্যের মধ্যে যাওয়া-আসা মানবিক যোগাযোগের গতিশীলতাকেই তুলে ধরে। এনসিপির বার্তা ছিল স্পষ্ট—রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত, এবং এই নীতির ব্যত্যয় জাতির গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে হুমকির মুখে ফেলবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 bornomalanews24.com
themesba-lates1749691102