চলতি ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য নির্ধারিত ১ শতাংশ কোটাকে ঘিরে চাঞ্চল্যকর অনিয়মের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শিক্ষা কোটা-১-এর আওতায় কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে ২ হাজার ৭৭ জন শিক্ষার্থী। অথচ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এ বছর এসএসসি পাস করেছে মাত্র ৩০ জন। ফলে প্রকৃত উপযুক্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা সামান্য হলেও কোটার সুবিধা নিয়েছে বহিরাগতরা। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা কোটা-২-এর ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়া স্থগিতাদেশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে এ কোটায় নির্বাচিত ১ হাজার ২৯৪ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি প্রক্রিয়া আপাতত ঝুলে গেল। বিষয়টি জানিয়ে ইতোমধ্যেই সব কলেজের অধ্যক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শিক্ষা কোটাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অসঙ্গতি সামনে আসছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন, এ কোটায় ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এমনকি ব্যবসায়ীদের সন্তানও সুযোগ পেয়েছে। সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও কোটার অপব্যবহারে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অভিভাবকেরা বলছেন, কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা কোটার মাধ্যমে নামকরা কলেজে ভর্তি হচ্ছে, অথচ যোগ্যরাই পিছিয়ে পড়ছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স ৬৭ বছর, এই বয়সে তাদের সন্তান থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। তারপরও কোটা বহাল রাখা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের সুবিধার জন্য। এ কারণেই ভর্তি কার্যক্রম জটিল হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যেই তিন ধাপে ভর্তি কার্যক্রমে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছে। তবে এখনো ৫ হাজার ২৪০ জন শিক্ষার্থী কোনো কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়নি, যাদের মধ্যে ২৯৫ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত। এদের জন্যই শুরু হয়েছে শেষবারের মতো আবেদন প্রক্রিয়া, যা চলবে ২২ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা পর্যন্ত। নির্বাচিতদের ফল প্রকাশ করা হবে ২৪ সেপ্টেম্বর। এরপর ২৫ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে এবং ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে হবে। সবশেষে বলা যায়, শিক্ষা কোটায় এই নজিরবিহীন জালিয়াতি ভর্তি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে আপাতত ভর্তি স্থগিত হলেও এর স্থায়ী সমাধান না হলে ভবিষ্যতেও মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।