অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার খবর যখন শুনেছিল দেশবাসী, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন তিনি সম্ভবত সরকারের মেয়াদকাল ও নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে কিছু বলবেন। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। এরপর থেকে এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে দেশবাসী কিছু জানতে পারেনি। অবশ্য সেনাপ্রধান দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের এক ধরনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। সরকার শুধু সংস্কারের কথাই বলে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোও সরকারের পক্ষে রয়েছে, তবে নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও তাগিদ রয়েছে তাদের পক্ষ থেকে। রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়া হলো, সংস্কারের কাজগুলো তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই করা উচিত এবং একইসঙ্গে নির্বাচনের একটা রোডম্যাপও থাকা চাই। দলগুলোর শীর্ষনেতাদের অভিমত হলো, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষিত হওয়ার পরই এককভাবে নাকি জোটগতভাবে তারা নির্বাচন করবেন, তা চূড়ান্ত করা হবে। তারা আরও বলছেন, সংস্কার প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি আর তাই জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
সামগ্রিক অবস্থাদৃষ্টে আমরাও মনে করি, যত দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায়, জাতির জন্য ততই মঙ্গল। প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে সংস্কারের যে পরিধি উল্লেখ করেছিলেন, তা অনেক বিস্তৃত। চারদিক বিস্তৃত এই সংস্কারগুলো করতে হলে অনেক সময়ের প্রয়োজন। সংস্কার কাজে এত দীর্ঘ সময় নেওয়া হলে দেশে অস্থিরতা বাড়বে, জাতি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। তাই আমাদের বক্তব্য হলো, সংস্কারের পরিধি কমিয়ে আনতে হবে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কারই জরুরি মনে করি আমরা। বিগত সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছে মূলত গণতন্ত্র তথা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা দেশ শাসনের উদ্দেশ্য সামনে রেখে। গত তিনটি নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন আখ্যা দিয়ে গত সরকারকে স্বৈরাচারী বলেছে জনতা। সুতরাং বর্তমান সরকারের প্রধান টার্গেট হওয়া উচিত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা সরকার গঠন। এ দেশ অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত। প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন কাজ এবং তা দীর্ঘমেয়াদের। রাজনৈতিক দলগুলোই পারে এ দীর্ঘমেয়াদের কাজগুলো সম্পাদন করতে। বলতেই হবে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে ধারাবাহিক সরকারগুলোর সদিচ্ছার ওপর।
অতঃপর আমাদের শেষ কথা হলো, অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসতে হবে। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে হবে জরুরি সংস্কারের খাতগুলো এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষিত হলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে পড়বে, দেশবাসী নির্বাচনের মুডে চলে আসবে। আর সেক্ষেত্রে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারও নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেশ শাসন করতে পারবে; তা না হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে বৈ কমবে না।