‘ভুল চিকিৎসায়’ রাজধানীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ তুলে ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা রোববার একজোট হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালান। এর জেরে আবার মোল্লা কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালান কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। সোমবারও এর জেরে সংঘর্ষ হয়। অসমর্থিত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, এ ঘটনায় কয়েকজন হতাহত হয়েছেন।
অন্যদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার প্রতিবাদে এর চালকরা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ করেছেন। রোববার তারা নগরীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, পল্টন, প্রেস ক্লাব, শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, মোহাম্মদপুর, আসাদগেটসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন। এছাড়া যাত্রাবাড়ী ও মোহাম্মদপুরে সংঘর্ষ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে আরও কয়েকটি বিক্ষোভ-সমাবেশের ঘটনা ঘটেছে। বস্তুত বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের শহর হয়ে উঠেছে ঢাকা। এতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। ফলে প্রায় সব শ্রেণির মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
রোববার লক্ষ করা গেছে, এসব ঘটনায় নগরীতে জনভোগান্তি সৃষ্টি হলেও পুলিশ সেভাবে অ্যাকশনে যায়নি। বিভিন্ন পক্ষ বিক্ষুব্ধ হলেও সরকার যে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে, তা সাধুবাদযোগ্য। শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের উচিত সরকারের এ আচরণের মর্মার্থ বুঝে ভবিষ্যতে সংযমের পথ বেছে নেওয়া। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিক্ষোভের সময় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। অতীতেও দেখা গেছে, যে কোনো আন্দোলন বা বিক্ষোভের সময় সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন ও নিরীহ যাত্রীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়েছে, যা মোটেই কাম্য নয়। আমরা মনে করি, যে কোনো বিবদমান ঘটনায় আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা প্রতিষ্ঠাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তা না হলে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটে, বিঘ্নিত হয় নিরাপত্তা।
ভুলে গেলে চলবে না, অবরোধ-ভাঙচুরসহ কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড কখনোই দাবি আদায়ের মাধ্যম হতে পারে না। দেশের ছাত্রসমাজ, যারা দেশ গড়ার কাজের সহযোগী ও অংশীদারও বটে, তাদের ধৈর্যের পরিচয় দেওয়া উচিত। কখনোই ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হওয়া সমীচীন নয়। মনে রাখতে হবে, জনগণ ও সরকার একই বাইসাইকেলের দুটি চাকার মতো। একটি না থাকলে আরেকটি চলবে না। কাজেই উভয়ের স্বার্থরক্ষায় উভয়পক্ষকেই আন্তরিক হতে হবে। জনসাধারণের স্বার্থ সংরক্ষণের যৌক্তিকতা নিয়ে দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই। সব পক্ষের যৌক্তিক দাবি থাকতেই পারে, তাই বলে বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন দেশবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত হতে না পারে, সে বিষয়ে সবারই সচেতন থাকা উচিত। অন্যথায়, ষড়যন্ত্রকারীরা এ থেকে ফায়দা লুটতে পারে। সোমবার ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থানের’ ব্যানারে রাজধানীর শাহবাগ ও টিএসসি এলাকায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ এনে জড়ো করার যে ব্যর্থ চেষ্টা হয়, এটি তার জ্বলন্ত উদাহরণ। দাবি আদায়ের বিষয়ে সব পক্ষ সংযমের পরিচয় দিয়ে আলোচনার টেবিলকেই বেছে নেবে, এটাই প্রত্যাশা।