বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৩ অপরাহ্ন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামী ৫ নভেম্বর

bornomalanews
  • Update Time : শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৪৯ Time View

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামী ৫ নভেম্বর। বিশ্ববাসী যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন সবসময়ই আগ্রহ নিয়ে প্রত্যক্ষ করে। যুক্তরাষ্ট্রেও জনমনে জোয়ারের সৃষ্টি হয়। দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকরা কয়েক সপ্তাহ ধরে দুই প্রার্থীর রাজনৈতিক অবস্থান এবং বক্তৃতা নিয়ে আলোচনা করছেন, বিভিন্ন জরিপ চালাচ্ছেন। তাদের মূল দু’টি দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট। রিপাবলিকানদের প্রতিনিধিত্বকারী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাটদের প্রতিনিধিত্বকারী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। কে হবেন প্রেসিডেন্ট? এসব আলোচনা করতে গিয়ে কূটনীতিক, রাজনৈতিক গবেষক ও পর্যবেক্ষকরা ব্যক্তিগত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক প্যারামিটার বিবেচনায় নিয়েছেন। এসব নিয়ামক ও প্রাক জরিপ নিঃসন্দেহে ৫ নভেম্বরের নির্বাচনকে আরো কৌতূহলোদ্দীপক করেছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দৌড় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও, বিশ্বের সব সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছে; কেননা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিভিন্ন পরিমাপে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র এবং আধিপত্য বিস্তারে সক্ষমতাসম্পন্ন। বর্তমানে গাজা যুদ্ধের ভয়াবহ পরিবেশ ও ইসরাইলকে সহায়তাকরণ, যেকোনো সময় ইরান-ইসরাইল পরিপূর্ণ যুদ্ধ শুরু, আরব দেশগুলোর ভেতর বিবিধ মেরুকরণ, তুরস্ক, চীন ও রাশিয়ার ফিলিস্তিনি সঙ্কটে অংশগ্রহণ, রাশিয়া-চীনের ঐক্য ও তাবৎকালের বৃহৎ সামরিক মহড়া, ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটোর অংশগ্রহণ ইস্যু ও রাশিয়ার পরমাণু হামলার আশঙ্কা, উত্তর-কোরিয়া ও রাশিয়ার সামরিক ঐক্য বিষয়গুলোর পরবর্তী কার্যক্রম ঢেলে সাজানোর ক্ষেত্রে কে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন, তার চিন্তাধারা ও মানসিকতা কেমন সেসব অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমেরিকায় চলছে নির্বাচনের জোর প্রচারণা।মার্কিন নির্বাচনী প্রচারণা বিশ্লেষণ করার সময় কিছু প্যারামিটার বিবেচনায় নিতে হয়। প্রার্থীদের ব্যক্তিত্ব, তাদের আগের কাজকর্ম গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচিত হয়। এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ালেন। ইতিহাসে, আমেরিকার ইতিহাসে ছয়জন প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় মেয়াদে পুনর্নির্বাচনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে জো বাইডেনের মতো তারা কেউই প্রথমে তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করে, পরে তা প্রত্যাহার করে নেননি। ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি বয়সী নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন বাইডেন। তার প্রেসিডেন্সি ও প্রার্থিতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। অনেক চিকিৎসক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক বাইডেনকে মূলত তার বয়স ও স্বাস্থ্যগত উদ্বেগের কারণে দ্বিতীয় মেয়াদে পুনর্নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার আহ্বান জানিয়েছেন। বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রতি তার সমর্থনের কথা জানান।

বর্তমানে ৮১ বছর বয়সী বাইডেন স্নায়ুযুদ্ধের চরম সময়ে পরিণত হয়েছেন এবং তার বিশ্বদর্শন তারই প্রতিফলন, হ্যারিস স্নায়ুযুদ্ধোত্তর বিশ্বে বেড়ে উঠেছেন যেখানে আমেরিকান আধিপত্যের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে এবং বিদেশে তার আদর্শ সমুন্নত রাখার ব্যর্থতা।

ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে, ৫৯ বছর বয়সী হ্যারিসের চার বছর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তুলনামূলক কোনো সুফল আসেনি। তিনি ২০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন, দেড় শতাধিক বিদেশী নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

প্রসিকিউটর হিসেবে তার ঝোঁক হচ্ছে রাজনৈতিক ব্যবস্থা বা নেতাদের পরিবর্তে আইনের শাসন ও আন্তর্জাতিক রীতিনীতির প্রতি আনুগত্য দিয়ে দেশগুলোকে বিচার করা। অগণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে এবং আমেরিকার নিজস্ব গণতান্ত্রিক ত্রুটিগুলো স্বীকার করে তিনি বাইডেনের ‘গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্র’ কাঠামোকে হ্রাসমূলক, ভণ্ডামি ও অবাস্তব বলে মনে করেন। যদিও হ্যারিস বাইডেনের সাথে একমত যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত ভালোর জন্য একটি শক্তি, তবে তিনি অনিচ্ছাকৃত পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক এবং একতরফা হস্তক্ষেপের চেয়ে বহুপাক্ষিক পদ্ধতির পক্ষে।

কমলা হ্যারিস গর্ভপাতের ফেডারেল অধিকার সমর্থন করেন এবং ভ্রূণের কার্যকারিতার আগে প্রক্রিয়াটি নিষিদ্ধ করা থেকে রাজ্যগুলোকে অবরুদ্ধ করার পক্ষে। তিনি গর্ভপাতের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার ছিলেন, আমেরিকার ইতিহাসে তিনিই প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট যিনি গর্ভপাত ক্লিনিক পরিদর্শন করতেন। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ফেডারেল গর্ভপাত নিষেধাজ্ঞায় স্বাক্ষর করবেন না, তিনি বিশ্বাস করেন, রাজ্যগুলোর তাদের নিজস্ব বিধিনিষেধ আরোপ করার ক্ষমতা থাকা উচিত।

গত নির্বাচনে বাইডেনের কাছে হেরে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে নির্বাচিত যেকোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন। তিনি ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং দাবি করেন যে জালিয়াতির মাধ্যমে নির্বাচন চুরি করা হয়েছিল। ট্রাম্পের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি তার সমর্থকরা ইউএস ক্যাপিটলে হামলা চালায়। এই হামলা মার্কিন রাজনীতির ভিত নাড়িয়ে দেয়। সে কারণে অনেকটা প্রতিশোধ নিতে এবং ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে জিততে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের আরেকটি পরাজয় দেশটিতে রাজনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা মনে করছেন যে, ট্রাম্প নির্বাচনে জিতুন বা হেরে যান, ফলাফল আমেরিকান গণতন্ত্রের ওপর এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দুই প্রার্থীর ঘরোয়া ইস্যুতে গতানুগতিক অবস্থান। যদিও হ্যারিস মূলত ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রতিনিধিত্ব করছেন ও দলের নির্বাচনী এলাকার ঐতিহ্যবাহী অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান সমর্থন করছেন, অন্য দিকে ট্রাম্প রিপাবলিকান ভোটারদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করছেন। ডেমোক্র্যাটরা আরো উদার এবং আন্তর্জাতিকতাবাদী, রিপাবলিকানরা আরো রক্ষণশীল এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী। তদনুসারে, ডেমোক্র্যাট হ্যারিস উদারপন্থী, সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠী এবং সংখ্যালঘুরা তাকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন, অন্যদিকে ট্রাম্প মূলত রক্ষণশীল এবং অর্থনৈতিকভাবে উদার হওয়ায় দেশীয় গোষ্ঠীর ভোট চাইছেন। হ্যারিস তার ঐতিহ্যবাহী ভোটারদের সমর্থন পেতে সমস্যায় পড়তে পারেন। একদিকে ডেমোক্র্যাটদের অনেকেই এমন প্রেসিডেন্টকে ভোট দিতে চান না, যিনি ইসরাইলের গণহত্যানীতি সমর্থন করেন। অন্যদিকে, তারা খারাপ প্রত্যাবর্তন রোধ করতে হ্যারিসকে ভোট দিতে চান।

ট্রাম্প প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারণার সময় অস্ত্র পলিসি বিষয়ে নিজেকে দ্বিতীয় সংশোধনীর রক্ষক হিসেবে অবস্থান নিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের জুনে সুপ্রিম কোর্ট বাম্প স্টকের ওপর ট্রাম্প-যুগের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দিয়েছিল। ২০২২ সালের ২৪ মে, টেক্সাসে এলিমেন্টারি স্কুলে গুলি চালানোর পরে, ট্রাম্প মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি জাতির দৃষ্টিভঙ্গির মারাত্মক পরিবর্তন এবং টপ-টু-বটম সুরক্ষা ওভারহল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। দেশের স্কুলগুলোতে আগ্নেয়াস্ত্র বিধিনিষেধ আরোপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এবার ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পুনর্নির্বাচিত হলে বাইডেন আমলের বন্দুক নিষেধাজ্ঞা বাতিল করবেন।

হ্যারিস জানান, সর্বজনীন ব্যাকগ্রাউন্ড চেক বাস্তবায়ন এবং বিপজ্জনক ও অস্থিতিশীল বলে মনে করা লোকদের কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নেয়ার জন্য লাল পতাকা আইন প্রসারিত করবেন। তিনি তথাকথিত অ্যাসল্ট অস্ত্র এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ম্যাগজিন নিষিদ্ধ করতে চান। মিনিয়াপোলিস পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে হ্যারিস পুলিশিং নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিস বলেছেন, মেরিল্যান্ডে নির্বাচনী প্রচারণার সময় বন্দুক সহিংসতা ঠেকাতে ফেডারেল পর্যায়ে আরো কিছু করা দরকার। ২০২২ সালে নিউ ইয়র্কে হাই-প্রোফাইল শুটিংয়ের পর হ্যারিস অ্যাসল্ট-স্টাইল অস্ত্র নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বৈদেশিক নীতির বিষয়গুলো পরখ করলে দেখা যাবে, প্রার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে মিল-অমিল দু’টিই রয়েছে। হ্যারিস অভিবাসন ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে তার ধারণা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। ট্রাম্প অভিবাসন সংস্কার প্যাকেজের পক্ষে থাকলেও বৈধ ও অবৈধ উভয় অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তার দাবি, আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কাজ শেষ করা। জলবায়ু ইস্যুতে হ্যারিস গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই নয়, সব মানবতার জন্য অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছেন। অন্যদিকে, ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং পয়সাকড়ি খরচে অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছেন না। তার সোজা কথা ‘সবার বোঝা আমেরিকার ঘাড়ে কেন?’ তিনি জনগণকে ব্যাখ্যা করেছেন, জলবায়ু সঙ্কট নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করবেন। বৈশ্বিক শক্তি সম্পর্কে দুই প্রার্থীর দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। কমলা হ্যারিস কট্টর রুশবিরোধী এবং ইউরোপে আমেরিকার অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন, ট্রাম্প ট্রান্সআটলান্টিক অ্যালায়েন্সের বা ন্যাটোর সমালোচক এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে চান। হ্যারিস উল্লেখ করেছেন, রাশিয়ার হুমকি মোকাবেলায় যত সময় লাগুক না কেন তার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন অব্যাহত রাখবেন। হ্যারিসের বিপরীতে, ট্রাম্প বুঝিয়েছেন তিনি ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তা বন্ধ করবেন এবং চীনের বিরুদ্ধে কঠিন আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেবেন। প্রযুক্তি থেকে শুরু করে অর্থনীতি ও সামরিক সব ক্ষেত্রেই দূরপ্রাচ্যের দেশ চীনের উত্থানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চান ট্রাম্প।

গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ ক্ষেত্র হলো মধ্যপ্রাচ্য, এই বিষয়ে দুই পক্ষের নীতিতে খুব বেশি পার্থক্য নেই। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ওবামার মধ্যপ্রাচ্যনীতি পাল্টে দেবেন বলে দাবি করলেও তিনি তা করতে পারেননি। কাজেই তিনি মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান মার্কিন প্রশাসনকে উল্টে দেবেন, এমনটি আশা করার কোনো কারণ নেই। ইসরাইলের প্রতি দুই প্রার্থীর অভিন্ন বোঝাপড়া রয়েছে যার প্রতি হ্যারিস এবং ট্রাম্প উভয়ই পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন ও ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। এমনকি তারা ইসরাইলকে সমর্থন করার বিষয়ে তাদের প্রতিযোগিতা ঘোষণা করেছেন, যা আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয়। তবে হ্যারিস ইসরাইলবিরোধীদের ভোট পাওয়ার জন্য বলেছেন, তিনি ইসরাইলের মানবতাবিরোধী কাজ সমর্থন করেন না।

আবার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি নৃশংসতা নিয়ে কোনো প্রার্থীই প্রশ্ন তোলেননি এবং উভয়েই হানাদারদের সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কমলা হ্যারিস গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে বেশি সংবেদনশীল। তিনি সাধারণত বাইডেনের চেয়ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পক্ষে বেশি সমর্থক। ইসরাইলের দীর্ঘদিনের কট্টর সমর্থক ট্রাম্প হামাসের বিরুদ্ধে দেশটির পদক্ষেপকে সমর্থন করলেও আন্তর্জাতিক সমর্থন কমে যাওয়ায় দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। হ্যারিস গাজার মানবিক সঙ্কটের ওপর জোর দিলেও ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করেন। তিনি যুদ্ধবিরতি এবং দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে।

ইরানকে সরাসরি আক্রমণ করার ব্যাপারে ট্রাম্প খুব সাবধানী ছিলেন এবং জন বোল্টনকে হুয়াইট হাউজ থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তিনি ইরানের সামরিক ও আর্থিক ক্ষমতা লোপ করতে পরমাণু চুক্তি করেছিলেন যেটি বিপরীত ফল দিয়েছে। ইরানের সাথে সরাসরি যুদ্ধ করতে হ্যারিসের কোনো পরিকল্পনা নেই, তবে বাইডেন আক্রমণের জন্য হাঁকডাক করেছিলেন এবং জলে স্থলে ব্যূহ রচনা করে আবার পেছনে সরে আসেন।

নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, হ্যারিসের বৈশ্বিক বিষয়াবলি মুষ্টিবদ্ধ করার সম্ভাবনা ততই জোরালো হচ্ছে। বাইডেনের সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকলেও তার অনন্য বিশ্বদর্শন আন্তর্জাতিক মঞ্চে নেতৃত্বের একটি স্বতন্ত্র রূপের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

ব্লুমবার্গ ও মর্নিং কনসাল্ট জরিপে দেখা গেছে, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন, নেভাদা, অ্যারিজোনা, নর্থ ক্যারোলাইনা ও জর্জিয়া- এই সাতটি ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যে সামগ্রিকভাবে কমলা হ্যারিস দুই পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। সাতটি রাজ্যের মধ্যে ছয়টিতে হ্যারিস ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন এবং অ্যারিজোনায় দুইজনই সমান ভাগাভাগিতে অবস্থান করছেন। সিএনএন আরেকটি বিতর্ক অনুষ্ঠান করতে চাইলে, হ্যারিস রাজি হলেও ট্রাম্প পছন্দ করছেন না।

কমলা হ্যারিস বা ট্রাম্প যিনিই প্রেসিডেন্ট হোন না কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইনের নীতি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সিদ্ধান্ত ক্ষুণ্ণ হলেও একতরফা পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা অব্যাহত রাখবেন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 bornomalanews24.com
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102