বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্র করে পাঁচজনকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ২৫২ জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি পৃথক মামলা করা হয়েছে। ঢাকা ও সিলেটে এ মামলাগুলো করা হয়। সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনরা চারটি মামলা করেন। আদালত যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে অভিযোগগুলো এজাহার হিসাবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
শরীফ হত্যা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর যাত্রাবাড়ী থানার সামনে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে সাইফ আরাফাত শরীফকে হত্যার অভিযোগে তার মা মরিয়ম ৯৪ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন শামীম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৪ আগস্ট ভোরে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকালে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সমন্বয়ক সেজে তিন ছাত্রকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে।
ইয়াসিন হত্যা: একই ঘটনায় সাইদুল ইসলাম ইয়াসিনের মৃত্যুতে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন তার মা শিল্পী আক্তার।
ওবায়দুল হত্যা: গুলিতে ওবায়দুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৫৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন স্বজন মো. আলী।
উল্লেখযোগ্য অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাছান মাহমুদ, রমেশ চন্দ্র সেন, দ্রুপদি আগরওয়ালা, আছাদুজ্জামান, হারুন-অর-রশীদ।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ৪ আগস্ট বিকাল ৫টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলা পেট্রোলপাম্পের সামনে আওয়ামী লীগের নেতারাসহ ১৪ দলের নেতাকর্মীরা নির্বিচারে হাজারো জনতার ওপর গুলি চালায়। এতে ওবায়দুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
রাসেল হত্যা: ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় কাজলা ফুটওভার ব্রিজের কাছে গুলিতে রাসেল মারা যান। এ ঘটনায় তার ভাই রুবেল শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৩৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন। উল্লেখযোগ্য অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন আসাদুজ্জামান খান কামাল, মশিউর রহমান মোল্লা সজল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, হারুন-অর-রশীদ।
সিলেটে হত্যা মামলার আসামি শেখ হাসিনা: সিলেটে আরও একটি হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৫১ জনকে আসামি করা হয়েছে। ৪ আগস্ট গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের বারোকোর্ট এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশ-আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংঠনের নেতাকর্মীদের হামলা-গুলিবর্ষণের অভিযোগে সোমবার দুপুরে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ২য় আদালতে মামলাটি করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার কুমারপাড়া শিলঘাট এলাকার ওয়াহিত আলীর ছেলে মো. কয়ছর আহমদ।
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সিলেট-৬ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাবেক পৌর মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল, কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন। আদালত এজাহারটি আমলে নিয়ে এফআইআর হিসাবে গ্রহণ করার জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়-৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে একদফা দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের বারোকোর্ট এলাকায় মিছিল চলাকালে পুলিশ, বিজিবি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ দেশি-বিদেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে বাদীর ছেলে সানি আহমদ গুলিবিদ্ধ হয়। পরে সে হাসপতালে মারা যায়।