দেশের মূলস্ফীতি এখনো লাগামহীন অবস্থায় রয়েছে। তবে কিছুটা স্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফের নীতি সুদের হার বৃদ্ধির চিন্তা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেক্ষেত্রে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহেই মুদ্রানীতির কমিটির সঙ্গে বৈঠককে নীতি সুদহার ফের বাড়ানোর হতে পারে।
একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারের বাইরে মৌখিকভাবে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা রহিত করা হয়েছে।
বুধবার (০৪ সেপ্টেম্বর) ব্যাংকার্স সভায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের এ নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বৈঠকে থাকা একাধিক ব্যাংকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র বলছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এ মাসেও যদি বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অভ্যহত থাকে তাহলে চলতি মাসের শেষ দিকে মুদ্রানীতির বৈঠক করে নীতি সুদ হার ফের বাড়ানো হবে।
সেক্ষেত্রে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়নো হতে পারে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসা পর্যন্ত নীতি সুদহার বাড়াতে থাকবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের মুদ্রা বাজার এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এখনো সম্ভব হয়নি। যতদিন মূল্যস্ফীতি বাড়বে নীতিসুদ হারও বাড়তে থাকবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র বলছে, ব্যাংকগুলোকে গত গভর্নরের আমলে সার্কুলারের বাইরে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিলো সেগুলো এখন আর কার্যকর থাকবে না। সেক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো নিজেদের মতো করে সুদের হার নিয়ে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পাবে।
অর্থাৎ মৌখিক ভাবে বেধে দেওয়া ঋণের সুদ হার এখন আর ১৪ শতাংশে আটকে রাখা হবে না। মার্কেট অনুযায়ী ঠিক হবে ঋণের সুদ হার।
তবে এ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে কেউ যাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বা অনৈতিকতার আশ্রয় না নেয় সে বিষয়ে শতর্ক করা হয়েছে।
একই সঙ্গে আগের গভর্নরের সময়ে ক্রেডিট কার্ডের সুদ হার ১৮ শতাংশের বেশি যাতে না যায় সে মৌখিক নির্দেশনা ছিলো। তা বাতিল করে সাকুর্লার অনুযায়ী সুদ হার নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।
সেক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বাড়বে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার। পাশাপাশি আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে বিভিন্ন ধরণের মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন আগের গভর্নর, সেসব নির্দেশনাও তুলে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলছে, সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণে ক্রলিং পেগের ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এখন ১২০ টাকার মধ্যেই ডলার ক্রয় বিক্রিয় করতে পারছেন। এই ডলার ক্রয় বিক্রয় যেন কোন ভাবেই ১২০ টাকার উপরে না যায় সে বিষয়ে ব্যাংকারদের অনুরোধ করেছেন গভর্নর।
যদি দর আরও বৃদ্ধির দরকার হয় মার্কেট বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকই নির্দেশনা দিবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
এ ছাড়া ব্যাংকার্স মিটিংয়ে ব্যাংকগুলোর খারাপ সম্পদ উত্তোলনে শীর্ষ নির্বাহীদের আরও বেশি ভূমিকার আশা করেছেন গভর্নর।
সার্বিক বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ব্যাংকার্স মিটিংয়ে একাধিক বিষয়েই আলোচনা হয়েছে।
বিশেষ করে সুদের হারের যেসব মৌখিক ক্যাব ছিলো সেগুলো আর থাকবে না। আর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসা পর্যন্ত নীতি সুদ হার বাড়তে থাকবে বলেও উল্লেখ করেছেন গভর্নর।
এছাড়া ব্যাংকগুলোকে ১২০ টাকার মধ্যে ডলার ক্রয় বিক্রিয় করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।