সমাবেশ ঘিরে যানজট ছড়িয়ে পড়েছে মধ্য ঢাকা থেকে প্রায় পুরো শহরেই। ফেইসবুকে ট্রাফিক এলার্ট গ্রুপে অনেকে ভোগান্তির কথা জানাচ্ছেন।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ইসলামি মহাসম্মেলনে’ অংশ নিতে মানুষের ঢল নেমেছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে শত শত বাস ভরে ঢাকার বাইরে থেকে লোকজন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসায় মানুষের চাপ আর যানজটে প্রায় থমকে গেছে ঢাকার রাস্তাগুলো।
সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ‘দাওয়াত ও তাবলিগ, মাদারেসে কওমিয়া এবং দীনের হেফাজতের লক্ষ্যে’ এ মহাসম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
গত রোববার এক বিবৃতিতে এই মহাসম্মেলনের ডাক দেন দেশের ৪১ জন ‘বিশিষ্ট আলেম’। দেশের সর্বস্তরের আলেম–ওলামা ও ‘আপামর তাওহিদি জনতাকে’ মহাসম্মেলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয় সেখানে।
সেই ঘোষণায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস ও ট্রাকে ভরে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ লোকজন সম্মেলনস্থলের দিকে যাওয়া শুরু করে। সকাল ১০টার দিকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। শাহবাগ মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে দেয় পুলিশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়ে শাহবাগ মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আব্দুল বাতেন বলেন, “যতক্ষণ প্রোগ্রাম চলবে, ততক্ষণ ভেতরের সড়কগুলোর যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া বাইরের সড়কে যানবাহন চলচাল করছে।”
শাহবাগ মোড়েও ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজনে চলাচলকারীদের যেতে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান বাতেন।
এদিকে দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের অবস্থানের কারণে এসব সড়কে যান চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে লাখো মানুষের জমায়েতের চাপ পড়েছে বাইরের সড়কগুলোতেও। প্রায় স্থবির হয়ে আছে প্রেসক্লাব, মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ হয়ে সায়েন্সল্যাব এবং শাহবাগ থেকে বাংলামোটর দিকের সড়কের দুই পাশ। এই বাড়তি জটলার প্রভাব পড়েছে নগরীর অন্যান্য সড়কেও।
সপ্তাহের শুরুতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাবলিগ জামায়াতের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে একপক্ষ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়।
তারপরও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশের বাড়তি সতর্কতা দেখা গেছে সকাল থেকে। বিভিন্ন পয়েন্টে বাড়তি পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি শাহবাগ থানার সামনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশে জলকামান ও এপিসি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “তাদেরকে সমাবেশের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী সকাল থেকেই তারা জমায়েত হতে থাকে। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুরো এলাকায় বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।”
এদিকে সমাবেশ ঘিরে যানজট ছড়িয়ে পড়েছে মধ্য ঢাকা থেকে প্রায় পুরো শহরেই। ফেইসবুকে ট্রাফিক এলার্ট গ্রুপে অনেকে ভোগান্তির কথা জানাচ্ছেন।
শহীদুল ইসলাম নিহান নামে একজন লিখেছেন, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকা গুলিস্তান থেকে শাহবাগ, কাকরাইল, ফার্মগেট পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঢাকাবাসী রাস্তায় বের হবেন না, বড় প্রোগ্রাম। ঢাকার বাহির থেকে লাখো লাখো মানুষ এসেছেন, সকলের ভোগান্তি হবে।”
বৈশাখী বড়ুয়া নামে একজন লিখেছেন, “বুঝলাম না। স্কুল কলেজ অফিস সব বন্ধ দিত আজকে…।”
বৈশাখীর পোস্টে রাসেল রানা নামে একজন মন্তব্য করেছেন, “বাংলাদেশে যত সমাবেশ আন্দোলন আছে তা আইন করে শুক্রবারে করা হোক।”
যানজট নিয়ন্ত্রণে ঘর্মাক্ত হয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ সদস্যদের অনেকটা হাল ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
পুলিশের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান বলেন, সকাল থেকে ঢাকার বাইরে থেকে শত শত বাস এসেছে। এগুলো শাহবাগ, নীলক্ষেত, শহীদুল্লাহ হলসহ আশপাশের এলাকায় রাখা হয়েছে। ফলে সেসব এলাকার রাস্তাগুলো এখন বাসের দখলে, অন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে রয়েছে।
ঢাকার অন্য রাস্তাগুলো সচল থাকলেও বাইরে থেকে প্রচুর লোক শহরে ঢোকায় রাস্তায় যানবাহনের গতির ধীর হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।