ঢাকা, বৃহস্পতিবার – এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ঢেলে সাজানোর চেষ্টায় নিত্যনতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা এবং বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের বিষয়টি। দলগুলোকে পেমেন্ট দিতে না পারা, ফ্র্যাঞ্চাইজির সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ও বিসিবির দায়িত্বহীনতা, এসব নিয়েই আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে, বিপিএলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল প্রকাশ্যে তার ক্ষোভ জানান। তিনি মনে করেন, এই সমস্যা শুধু বিপিএলকেই ছোট করে না, বরং দেশের ক্রিকেটের জন্যও ক্ষতিকর বার্তা দেয়।
বুধবার রাতে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ১১তম ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে তামিম ইকবাল তার মতামত ব্যক্ত করেন। তার মতে, বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি বাছাইয়ের সময় আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। তামিম বলেন, “যখন ফ্র্যাঞ্চাইজি নিচ্ছেন, খুব সতর্ক হওয়া উচিৎ, কাকে দল দিচ্ছেন, কাকে দিচ্ছেন না। যদি এক সময় দেখা যায়, একটি দল খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক দিতে পারছে না, তবে সেটা বিপিএল এবং দেশের ক্রিকেটের জন্য খারাপ সংকেত।”
এ সময় তামিম তার ২০১৩ সালের পারিশ্রমিক বকেয়ার প্রসঙ্গও তোলেন। তিনি বলেন, “২০১২-র কথা বারবার আনা হচ্ছে, কিন্তু আসলে সেটা ২০১৩ সালের বিষয়। আমি বোর্ডের কাছে যে পেমেন্ট আশা করেছিলাম, সেটি পুরোপুরি ছিল না, তবে অবশেষে বিষয়টি সমাধান হয়েছিল।” তার কথায়, এই ধরনের সমস্যা ভবিষ্যতে যেন আর না হয়, সেজন্য বিসিবির উচিত ছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা।
এছাড়া, তিনি আরো বলেন, “ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে কিছু এমনও রয়েছে, যারা খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক দিতে না পারছে। একসময় এমনও হয়েছে, ৫০ শতাংশ বাকি থাকা পরেও দরকষাকষির মাধ্যমে ২৫ শতাংশ দিয়েছিল, এবং খেলোয়াড়রা সন্তুষ্ট হয়ে চলে গিয়েছিল। এখানে দোষ তো খেলোয়াড়দের না, দোষ ফ্র্যাঞ্চাইজি ও বিসিবির।” তার মতে, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর এই দায়িত্বহীনতার ফলে ক্রিকেটারদের ক্ষতি হয় এবং দেশের ক্রিকেটও তার প্রভাব ফেলে।
রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির উদাহরণ দিয়ে তামিম আরও বলেন, “এখনও রাজশাহীর ক্রিকেটাররা পড়ছেন সীমাহীন ভোগান্তিতে। তাদের নিজেদের পকেট থেকে খরচ করতে হচ্ছে, আর ফ্র্যাঞ্চাইজির দায়িত্বহীনতায় ক্রিকেটাররা অবহেলার শিকার।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিসিবি দ্রুত এই সমস্যাগুলোর সমাধান করবে এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি যাতে আর সৃষ্টি না হয়, তার ব্যবস্থা নেবে।
তামিম আরও বলেন, “এই সমস্যা শুধু বিপিএলকেই ছোট করে না, বরং বিদেশি ক্রিকেটারদের জন্যও বাজে বার্তা দেয়। অনেক বিদেশি ক্রিকেটার আসতে চায়, কিন্তু এমন ঘটনা ঘটলে তারা চিন্তা করতে বাধ্য হবে।”
এদিকে, তামিম একটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন যা ড্রাফটের বাইরে সাইনিং করা ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বিষয়ক ঝামেলা এড়াতে সহায়ক হতে পারে। তার মতে, “যখন ড্রাফটের বাইরে কোনো ক্রিকেটার সাইন করেন, তখন তার পারিশ্রমিকের বিষয়ে একটি লিখিত চুক্তি করা উচিত। এ চুক্তির একটি কপি বিসিবি ও ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছে রাখতে হবে, যাতে বিসিবি জানে খেলোয়াড় কত টাকা পাচ্ছে এবং কোনো সমস্যা হলে তারা তা সমাধান করতে পারে।”
তামিম আরও যোগ করেন, “আমি চাই বিপিএল আরও বড় হোক, তবে এর জন্য যে কাজগুলো করতে হবে, তা আমরা ঠিকঠাক করছি না। ভবিষ্যতে আমি নিজেও এই ধরনের সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখতে চাই।”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে তামিম ইকবাল শুধু বিপিএল নয়, দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ উন্নতির জন্যও একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তার মত অনুযায়ী, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঠিক নির্বাচন এবং খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা ছাড়া বিপিএল উন্নতির পথে এগোবে না।