মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের ফলে এশিয়া ও ইউরোপের শেয়ারবাজারে এক ভয়াবহ ধস নেমেছে। বিশ্বের প্রতিটি কোণে এই শুল্কের প্রভাব স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে। সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে (বাংলাদেশ সময়) তাইওয়ানের প্রধান সূচক টিএআইইএক্স এবং হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক প্রায় ১৩ শতাংশ কমে গেছে। একই দিনে জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচকও প্রায় ৮ শতাংশ পতনের সম্মুখীন হয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক কৌশলগত পরামর্শক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়া গ্রুপের সহযোগী রিন্টারো নিশিমুরা মন্তব্য করেন, “এই শুল্কের প্রভাব কেমন হবে, তা নিয়ে প্রচুর অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।” আর এই অনিশ্চয়তা মূলত শেয়ারবাজারে বড় ধস নামানোর পেছনে অন্যতম কারণ। এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প তার প্রশাসনের ব্যাপক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “বিশ্বের অনেক নেতা একটি চুক্তি করতে মরিয়া হয়ে আছেন।” গত সপ্তাহে দুই দিনের পতনের পর সোমবার যখন ওয়াল স্ট্রিট আবার চালু হবে, তখন মার্কিন শেয়ারবাজারের আরও ব্যাপক পতনের আশঙ্কা রয়েছে। গত সপ্তাহে মার্কিন শেয়ারবাজার ৬ লাখ কোটি ডলারের বেশি বাজারমূল্য হারিয়েছে—এটি একটি বিপর্যয়কর পরিসংখ্যান। অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ অরূপ রাহা বলেন, “ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বিষয়টি পূর্বাভাস করা গিয়েছিল। কিন্তু শুল্কের হার এত বেশি হবে, তা কেউ ভাবতে পারেনি।” তিনি আল–জাজিরাকে জানান, “এটি একটি বিশাল ধাক্কা। এশিয়ার বাজারগুলোতে এর প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত নেতিবাচক। আমি যদি একটি কোম্পানি পরিচালনা করতাম, তবে আমি এখনই কোনো দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নেব না। কারণ, কেউই জানে না আসলে কী ঘটতে চলেছে।” টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সোমবার ইউরোপের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচকগুলোতে মার্কিন শুল্কনীতির ধাক্কা ছিল স্পষ্ট। প্যান-ইউরোপিয়ান স্টক্স ৬০০ সূচক, যা ইউরোপের শেয়ারবাজারের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত, সোমবার লেনদেন শুরুর পরপরই ৬ শতাংশ কমে যায়। দিনের শুরুতে জার্মানির ডিএএক্স সূচকটি প্রায় ১০ শতাংশ পতন ঘটায়। আমস্টারডাম স্টক এক্সচেঞ্জে দরপতন হয়েছে ৬.২৪ শতাংশ। বেলজিয়াম স্টক মার্কেটে ৬.৩৪ শতাংশ এবং ফ্রান্সের শেয়ারবাজার সিএসি ৪০-এ ৬.১৪ শতাংশ পতন ঘটেছে। বাজার পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আগামী দিন ও সপ্তাহগুলোতে বিনিয়োগকারীরা আরও ভয়াবহ অস্থিরতার মুখোমুখি হতে পারেন। শিগগিরই বাণিজ্যযুদ্ধের সমাধান অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। মার্কিন শুল্ক আরোপের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশল নিয়ে আলোচনা করতে ব্লকটির শীর্ষ বাণিজ্য কর্মকর্তারা লুক্সেমবার্গে বৈঠক করছেন। তারা পাল্টাপাল্টি শুল্ক এবং অন্যান্য প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কেও আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র: আল জাজিরা