অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা ঘটেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীরা এখন এখানে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। এই পরিবর্তনের পটভূমিতে, ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে তুলে ধরেন। প্রতিনিধিদলে এলজির কর্মকর্তাসহ কোরিয়ার টেক্সটাইল, ফ্যাশন, স্পিনিং, লজিস্টিকস, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের বৃহৎ কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সোমবার, তারা চট্টগ্রামে কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শন করেন, যেখানে ইয়াংওয়ান করপোরেশন পরিচালিত শিল্পপার্কে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন অনেকেই। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের জন্য গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আপনারা এমন সময়ে বাংলাদেশে এসেছেন যখন আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করছি। এই নতুন বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ এখন সহজ ও ঝামেলামুক্ত।” তিনি আরও যোগ করেন, “বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করা আমাদের দায়িত্ব। আমি জানি, গত ১৬ বছরে আপনাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে; আমরা সেই সময়ের ক্ষতিপূরণ দিতে চাই।” ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে আসা কিহাক সাং প্রধান উপদেষ্টার কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেন এবং দেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও সরকারের ইতিবাচক নীতির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে আপনাদের ব্যবসার গন্তব্য এবং অনুপ্রেরণার উৎস বানান। আপনারা কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা রাখেন।” কিহাক সাং ঘোষণা করেন, ইয়াংওয়ান করপোরেশন চট্টগ্রামে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একটি টেক্সটাইল ও ফ্যাশন কলেজ স্থাপন করবে, যা বাংলাদেশকে বিশ্বের শীর্ষ টেক্সটাইল হাবে পরিণত করতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করবে। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেরিত সাম্প্রতিক চিঠিরও প্রশংসা করেন, যা নতুন মার্কিন প্রশাসনের নীতির কারণে উদ্ভূত উদ্বেগ নিরসনে সহায়ক হয়েছে। “চিঠিটি অত্যন্ত সুচিন্তিত ছিল,” তিনি বলেন, এবং গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন। বাংলাদেশের সাপ্লাই চেইন কাঠামো অনন্য উল্লেখ করে কোরিয়ান ফ্যাশন ও রিটেইল খাতের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল খাতও দ্রুত বিকাশমান, এবং দেশটি বিশ্ব বাণিজ্য কাঠামোতে শীর্ষ ওষুধ রফতানিকারক হতে পারে। একজন বিনিয়োগকারী দেশে একটি এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট) কারখানা স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেন। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিনিধিদলের একজন শীর্ষ কোরীয় সার্জনকে চট্টগ্রামে একটি হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাব দেন। বৈঠকে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন। এভাবে, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার সূচনা করছে।