ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের মাঠে কী এক অবিশ্বাস্য লড়াই! প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে থেকে জয়লাভের পথে যাত্রা শুরু করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। কিন্তু মাত্র ছয় মিনিটের ব্যবধানে লিওঁ পাল্টা দুই গোল করে ম্যাচে ফিরে আসে। অতিরিক্ত সময়ে আরও দুই গোল হজম করে স্বাগতিকরা ছিটকে পড়ার দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। এরপর যা ঘটল, তা যেন এক রূপকথার গল্প। ক্ষণে ক্ষণে মোড় বদলানো এই ম্যাচের শেষ সাত মিনিটে চিত্রপট আমূল বদলে দিয়ে, প্রত্যাবর্তনের নতুন এক আখ্যান রচনা করল হুবেন আমুরির দল। ৯ গোলের রুদ্ধশ্বাস এই লড়াইয়ে জয়লাভ করে ইউরোপা লিগের সেমি-ফাইনালে জায়গা করে নিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচটি ৫-৪ গোলে জিতে, দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ অগ্রগামিতায় এগিয়ে গেল তারা। এই লড়াইয়ের রোমাঞ্চকরতা পরিসংখ্যানেও প্রতিফলিত হচ্ছে। পজেশন রাখায় অলিম্পিক লিওঁ আধিপত্য করলেও, আক্রমণে দুই দলই ছিল প্রায় সমান। গোলের জন্য উভয় পক্ষ মোট ২১টি করে শট নেয়, সফরকারীরা লক্ষ্যে রাখতে পারে ৯টি, আর ইউনাইটেড ৮টি। গত সপ্তাহে লিওঁর মাঠে হওয়া প্রথম লেগেও দারুণ লড়াইয়ের সাক্ষী হয়েছিল সবাই। সেখানে শুরুতে পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়ে ইউনাইটেড জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আরেক গোল খেয়ে তারা জয় হাতছাড়া করে, ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়। ওই ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দুটি গোল হজমের পেছনে বড় দায় ছিল আন্দ্রে ওনানার। সেদিনের বাজে পারফরম্যান্সে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন ক্যামেরুনের এই গোলরক্ষক, দল থেকে বাদও পড়েন। প্রবল সেই ধাক্কা সামলে, দলে ফিরে দারুণ কয়েকটি সেভ করে তিনি হয়ে উঠলেন এই রূপকথার গল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বৃহস্পতিবার রাতের এই ম্যাচে মোট ৯ জন খেলোয়াড় জালের দেখা পেলেন। একজন দেখলেন লাল কার্ড; মিডফিল্ডার তোলিসো বহিষ্কার হওয়ায় অনেকটা সময় একজন কম নিয়ে খেলতে হয় লিওঁকে। ম্যাচের গোল উৎসবের শুরু দশম মিনিটে, আলেহান্দ্রো গার্নাচোর পাস পেয়ে ইউনাইটেডকে এগিয়ে নেন মানুয়েল উগার্তে। বিরতির ঠিক আগে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দিয়োগো দালোত। দ্বিতীয়ার্ধে আমুরির দল লাগাম হাতে রেখে অনেকটা সময় পার করে দেয়। কিন্তু নাটকীয় মোড় আসে ৭১তম মিনিটে, যখন তোলিসো হেডে ব্যবধান কমায় এবং সমতা টানেন নিকোলাস তাগলিয়াফিকো। নির্ধারিত সময় শেষের আগের মিনিটে লেনি ইয়োরোকে বাজে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন ফরাসি মিডফিল্ডার তোলিসো। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৪ স্কোরলাইন নিয়ে লড়াই গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে; সেখানে আরও দুই গোল করে সেমি-ফাইনালের জোরাল আশা জাগায় লিওঁ। ১০৪তম মিনিটে হায়ান শের্কি বাঁ পায়ের শটে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চার মিনিট পর সফল স্পট কিকে ব্যবধান বাড়ান লাকাজেত; ডি-বক্সে ফোফানাকে ডিফেন্ডার লুক শ ফাউল করায় পেনাল্টিটি পায় তারা। স্বাগতিক সমর্থকদের চোখেমুখে তখন তীব্র হতাশার ছাপ। টিভি পর্দায় ভেসে ওঠে ছোট্ট এক ইউনাইটেড ভক্তের মুখ, অনেক চেষ্টা করেও কান্না লুকাতে পারছিল না। খানিক পরেই তার মতো অগনিত সমর্থকের মুখে হাসি ফোটে। কাসেমিরো ডি-বক্সে ফাউলের শিকার হওয়ায় পেনাল্টি পায় ইউনাইটেড এবং ১১৪তম মিনিটে সফল স্পট কিকে নিভতে বসা আশা জাগিয়ে তোলেন ব্রুনো ফের্নান্দেস।