ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পুকুর থেকে সাজিদ আবদুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সাঁতার জানার পরও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা রহস্যজনক মনে করছেন তার স্বজন ও সহপাঠীরা। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে হাজারও শিক্ষার্থী সমবেত হন। এ সময় তারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তারা লাশ দেখে প্রশাসনকে জানিয়েছিল, কিন্তু প্রায় এক ঘণ্টা পর লাশ উদ্ধার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে থানা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ আসতে এত সময় লাগার কারণ জানতে চান তারা। শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, লাশ উঠানোর আধা ঘণ্টা পরেও সেখানে কোনো ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্স আসেনি। পরে তারা বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে সাজিদকে মেডিকেলে নিয়ে যান, এরপর তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়া, শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, লাশ সনাক্তের দুই ঘণ্টার মধ্যেও প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা কিংবা হল প্রভোস্টের দেখা মেলেনি। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে সিসি ক্যামেরা সচল নেই, যা নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে চাঁদা তুলে সিসি ক্যামেরা লাগানোর প্রস্তাবও দেন। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা সাজিদ আবদুল্লাহর মৃত্যুর তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ, ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা, আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট মনিটরিং, ক্যাম্পাসের চারপাশে নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান। দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা। এদিকে, সাজিদ আবদুল্লাহর গায়েবানা জানাজা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। পরে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হন। তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছেন, যতক্ষণ না ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটিত হয়। গত ১৭ জুলাই বিকাল পাঁচটার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে সাজিদ আবদুল্লাহর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখা যায়। পরে সাড়ে ৬ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইবি থানা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সাজিদ আবদুল্লাহর মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল কর্তৃপক্ষ আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।