বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন এক মোড়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ধাপে ধাপে কমানোর আশ্বাস দিয়েছে। তবে শর্ত হিসেবে তারা চাইছে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি আরও কমাতে। এ নিয়ে আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে, যা শিগগিরই একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষরের পথ প্রশস্ত করতে পারে। গতকাল রবিবার ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডেন লিঞ্চের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমানসহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বৈঠক শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করেছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি বাজার, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে। কিন্তু পাল্টা শুল্কের কারণে রপ্তানিতে অতিরিক্ত খরচ গুনতে হয়, যা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দেয়। সেখ বশির উদ্দিন বলেন, শুল্ক হ্রাস পেলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, বাংলাদেশ তাদের কাছ থেকে কৃষি, জ্বালানি ও বিমান খাতে আমদানি বাড়াক। এতে দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্য বজায় থাকবে। বাংলাদেশ এসব খাতে কেনাকাটা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং এ নিয়ে ভালো অগ্রগতি হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়েছে। তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি। বাংলাদেশ চাইছে এ হার অন্তত ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হোক। এ লক্ষ্যে তিন দিনের সফরে ঢাকায় থাকা মার্কিন প্রতিনিধিদল সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে। আলোচনার ভিত্তিতে ইতোমধ্যেই একটি খসড়া বাণিজ্যচুক্তি তৈরি করা হয়েছে। দর-কষাকষি শেষে উভয়পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে খসড়ায় সংশোধন এনে তা চূড়ান্ত করা হবে। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্কের এ অগ্রগতি দুই দেশের জন্যই লাভজনক হতে পারে। একদিকে বাংলাদেশের রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ ঘটবে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র পাবে নতুন খাতে বড় অর্ডার। সব মিলিয়ে আসন্ন চুক্তি দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।