ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিজয় এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পরাজয় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে বিএনপির শীর্ষ নেতারা এবং দলীয় কর্মী-সমর্থকরা এই ফলাফলকে অপ্রত্যাশিত ও হতবুদ্ধিকর বলে অভিহিত করছেন। হঠাৎ এমন বিশাল ব্যবধানের পরাজয় নিয়ে তারা নানা বিশ্লেষণ করছেন, কেউ কেউ জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন, আবার কেউ বিষয়টিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছেন। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ডাকসু থেকে উঠে আসা অনেক নেতা জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, কেউ কেউ সংসদে এসেছেন, আবার কেউ এখনও সংগ্রাম করছেন। তিনি ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানালেও সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। অন্যদিকে স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় একটি রাজনৈতিক দল কৌশলে নির্বাচনে জয়লাভ করেছে, যা সবাইকে বুঝতে হবে এবং এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন দাবি করেন, ছাত্রদলকে পরাজিত করতে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে শিবিরকে সমর্থন দিয়েছে। তার মতে, ছাত্রলীগের সঙ্গে শিবিরের পুরোনো সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে এই ফলাফল অর্জিত হয়েছে। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ডাকসু নির্বাচনে স্বৈরাচার ও রাজাকারের মিলন ঘটেছে, যা মুক্তচিন্তার পরাজয় এবং একটি গভীর ষড়যন্ত্রের প্রতিফলন। দলের ভেতরে আলোচনায় উঠে এসেছে, ছাত্রদলের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন অনুপস্থিতি এবং সংগঠন বিস্তারে ব্যর্থতা এই পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ। ২০১৯ সালের পর ছাত্রদল মধুর ক্যান্টিনে কার্যক্রম চালাতে পারেনি, যা সংগঠনের দুর্বলতার প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিপরীতে শিবির ছদ্মবেশে ছাত্রলীগের ছায়ায় কাজ করে, কোচিং সেন্টার ও ডিবেটিং ক্লাবের মাধ্যমে সমর্থন গোষ্ঠী গড়ে তোলে। তারা ক্যাম্পাসে নানা মাত্রায় সচেতনতা ও সহায়তা দিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, ছাত্রদল শুধু প্রচারণা চালিয়েছে, কিন্তু শিবির অনেক আগে থেকেই পরিকল্পিতভাবে মাঠে কাজ করেছে। সামাজিক মাধ্যমে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং ক্ষমতায় এলে ছাত্রলীগের মতো আচরণ করবে—এমন ধারণাও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। জামায়াত নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের বিজয়োচ্ছ্বাসমূলক স্ট্যাটাস এবং ফল ঘোষণার বিলম্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে এতকিছুর পরও ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কোনো সংঘাতমূলক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বিএনপির নেতারা এটিকে ইতিবাচক রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংঘাতের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ছাত্রদলকে শান্তিপূর্ণ রাজনীতির নির্দেশ দিয়েছেন। এই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে বিএনপি ভবিষ্যতের জন্য নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে চায়। তারা মনে করছে, রাজনৈতিক শত্রু চিহ্নিত করে এখন কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে জামায়াত-শিবিরের কৌশল মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দলীয় মতাদর্শের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদে নিয়োগ এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও বিএনপিকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে ডাকসুর মতো জাতীয় নির্বাচনেও জনতার বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া না যায়।