মঙ্গলবার, পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম বেলুচিস্তান প্রদেশে এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে, যেখানে সশস্ত্র জঙ্গিরা একটি ট্রেনে হামলা চালিয়ে ৪৫০ জনেরও বেশি যাত্রীকে জিম্মি করে। এই হামলার ফলে ট্রেনটির চালকও আহত হয়েছেন, যা পরিস্থিতিকে আরো সংকটজনক করে তোলে।
প্রত্যন্ত সিবি জেলায়, স্থানীয় সময় দুপুর ১টার দিকে, ট্রেনটি তার নির্ধারিত স্টপেজে থেমে যাওয়ার পর হামলাটি ঘটেছে। ট্রেনটি সকাল ৯টায় কোয়েটা থেকে যাত্রা শুরু করে, এবং প্রায় ৩০ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রাপথ পেরিয়ে উত্তর-পশ্চিম খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পেশাওয়ারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। অথচ, তার আগেই ঘটে যায় এই ভয়াবহ হামলা।
বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে, এবং একটি বিবৃতিতে জানায় যে, বন্দুকধারীরা রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ট্রেনটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং সিবি জেলায় ট্রেনটি থামিয়ে দেয়। এই হামলার পর, বিএলএ হুঁশিয়ারি দেয় যে, যদি কোনো চেষ্টা করা হয় জিম্মিদের উদ্ধার করার, তবে এর গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে।
কোয়েটার জ্যেষ্ঠ রেলওয়ে কর্মকর্তা মুহাম্মদ কাশিফ জানান, ট্রেনের ভেতরে ৪৫০ জনেরও বেশি যাত্রী ছিল, যারা বর্তমানে বন্দুকধারীদের হাতে জিম্মি। যাত্রীদের মধ্যে নারীরাও ছিলেন, এবং শিশুদেরও কোনো নিরাপত্তা নেই। সিবি অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী এলাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানায়, “জাফর এক্সপ্রেস” নামক যাত্রীবাহী ট্রেনটি থামিয়ে দিয়ে, যাত্রীদের জিম্মি করে রাখা হয়েছে, এবং ট্রেনচালক আহত হয়েছেন।
এছাড়া, যেখানে ট্রেনটি আটকে রয়েছে, সেই অঞ্চলটি পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত, যা জঙ্গিদের জন্য আক্রমণ পরিকল্পনা এবং আশ্রয় নেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক হয়ে দাঁড়ায়। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আশপাশের হাসপাতালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে, কারণ পরিস্থিতি দ্রুত আরো খারাপ হতে পারে।
বেলুচিস্তানে, যেখানকার জনগণ দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্রোহের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে, নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অনেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী অভিযোগ তুলেছে যে, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার করে বাইরের লোকজন লাভবান হচ্ছে, কিন্তু স্থানীয় জনগণ তার সুফল পায় না। তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে, পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে সহিংসতা বেড়ে গেছে, যা পরিস্থিতি আরো সংকটময় করে তুলেছে।
এটি পাকিস্তানের ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায়, যেখানে সন্ত্রাসী হামলাগুলোর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে, এবং ২০২৪ সালে এক হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যা এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।