কাশ্মীর হামলার প্রতিক্রিয়ায় কবীর সুমনের যুদ্ধবিরোধী বক্তব্য কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল ২৬ জন নিরীহ পর্যটককে হত্যা করার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধাবস্থার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকারের ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানের বিরুদ্ধে এবার যুদ্ধবিরোধী কণ্ঠস্বর উঠেছে ভারতের ভেতর থেকেই। খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী কবীর সুমন প্রকাশ করেছেন তাঁর তীব্র প্রতিক্রিয়া। কবীর সুমন বলেন, “আমি সম্পূর্ণ যুদ্ধের বিরুদ্ধে। সে যুদ্ধ যেই করুক, যারাই করুক, যেভাবেই করুক—আমি যুদ্ধবিরোধী ব্যক্তি।” তিনি উল্লেখ করেন যে, তাঁর গানে গানে যুদ্ধ বন্ধের কথা বলা হয়েছে এবং সেই গান আজ সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মনে পড়বে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এই দেশ যখন ভাগ হয়েছিল, আমার অনুমতি নিয়েছিল কেউ? দেশের কোনও মানুষের অনুমতি নিয়েছিল কেউ? দেশের নেতারা কোনও জনগণের অনুমতি নিয়েছিল?” কবীর সুমন তাঁর জন্মের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, “আমি ১৯৪৯ সালে জন্মেছিলাম। আমি কোথায় জন্মালাম—তখন তো আমার কোনও ব্যক্তিগত পছন্দ ছিল না! তখন থেকেই সব জিনিস সন্দেহের চোখে দেখি।” কবীর সুমন আরও বলেন, “দেশপ্রেম আমার কাছে একটা বুজরুকি। সেখানে মানবপ্রেম নেই। মানুষের জন্য প্রেম নেই, প্রাণীদের জন্য প্রেম নেই।” তিনি যুদ্ধের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, “যুদ্ধ একেবারেই কাম্য নয়। আজকের সকালে খুব ব্যথিত হয়ে জানাচ্ছি—একবার ভেবে দেখুন, একটা যুদ্ধ হচ্ছে, অস্ত্র চালাচ্ছি আমরা, অথচ প্রাণ হারাচ্ছে তারা, যারা এই পৃথিবীর কোনও ক্ষতি করেনি।” তিনি পরিবেশের ক্ষতির কথাও তুলে ধরেন, “গাছ পুড়ে যাচ্ছে। গাছ ধ্বংস নিয়ে কোনও নেতার মাথাব্যথা নেই। যারা দেশপ্রেম দেখাচ্ছেন, তারা এই গাছ, পাখি, পোকামাকড় মারা যাওয়ার কথা বলছেন না। পানি বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে, এটা নিয়েও কারও হেলদোল নেই।” সবশেষে, কবীর সুমন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সিঁদুর দেখাচ্ছে? কীসের অপারেশন সিঁদুর! আর বেশি বলতে চাই না। আমার মুখ দিয়ে এবার বললে খারাপ খারাপ কথা বের হবে! আমি ৭৭ বছরের বৃদ্ধ। আমি সম্পূর্ণভাবে এই ‘দেশপ্রেমের’ বিরুদ্ধে এবং এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে।” কবীর সুমনের এই বক্তব্য যুদ্ধের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা মানবিকতা ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতার গুরুত্বকে তুলে ধরছে। তাঁর এই অবস্থান দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সূচনা করেছে।