রাশিয়ার পুরোনো মিত্র ভারতের গোলা যাচ্ছে ইউক্রেনে। জানা গেছে, ভারতের তৈরি গোলা ইউরোপে বিক্রি করা হয়। পরে সেই গোলা ইউরোপের কয়েকটি দেশ হয়ে ইউক্রেনের চলে যায়। আর সেই অস্ত্রই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ব্যবহার করে ইউক্রেন।
বৃহস্পতিবার ভারত, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং সমরাস্ত্র শিল্পের ১১টি সূত্রের বরাত দিয়ে এমন তথ্যই জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এক বিশেষ প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে, নয়াদিল্লি জানে যে তাদের বিক্রি করা অস্ত্র ইউরোপের বিভিন্ন দেশ হয়ে শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনে যায়। বিষয়টি নিশ্চিত জানলেও গোলা রপ্তানি বন্ধে কোনো হস্তক্ষেপ নেয়নি ভারত।
রয়টার্সের হাতে থাকা বিভিন্ন দেশে কাস্টমস বিভাগের তথ্য এবং একাধিক সূত্র বলেছে, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় গোলাবারুদ ইউক্রেনে যাচ্ছে। ভারতীয় অস্ত্র রপ্তানি প্রবিধান অনুসারে, দেশটি যে পক্ষের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে কেবল তারাই সেই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। এর অন্যথা হলে ভারত অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার অধিকার রাখে।
তিন ভারতীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত জুলাইয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সময়সহ অন্তত দুটি বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানায়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জসওয়াল জানিয়েছেন, ভারত ইউক্রেনের কাছে কোনো গোলা বিক্রি করছে না।
ভারত সরকারের দুই কর্মকর্তা ও প্রতিরক্ষা শিল্পের দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইউক্রেনে খুব সামান্য পরিমাণ ভারতীয় গোলা যায়। একজন কর্মকর্তা অনুমান করেছেন, যুদ্ধের পর থেকে ইউক্রেন যে পরিমাণ গোলাবারুদ আমদানি করেছে তার মাত্র ১ শতাংশ ভারতীয় উৎস থেকে যাওয়া।
একজন স্প্যানিশ, একজন ভারতীয় কর্মকর্তা এবং ভারতীয় সমরাস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যন্ত্রের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইউরোপের যেসব দেশ ভারতীয় গোলাবারুদ ইউক্রেনে পাঠাচ্ছে তার মধ্যে ইতালি ও চেক প্রজাতন্ত্র অন্যতম।
তবে এ বিষয়ে রয়টার্স জানতে চাইলে ইউক্রেন, ইতালি, স্পেন এবং চেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
দিল্লির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে অবগত ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের এক নির্বাহী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ভারত ইউরোপে সরবরাহ বন্ধ করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বুধবার বলেছেন, কিয়েভ রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে বিজয় পরিকল্পনা পুরোপুরি প্রস্তুত করেছে। জেলেনস্কি আরও বলেছেন, সবকিছু ঠিক করা হয়েছে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- এটি বাস্তবায়নের সংকল্প। কিয়েভ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, শান্তির কোনো বিকল্প হতে পারে না। কোনোভাবে যুদ্ধ বন্ধ রাখা হলে বা অন্য কোনো কারসাজি করা হলে তা কেবল রাশিয়ার আগ্রাসনকে আরেক স্তরের দিকে নিয়ে যাবে। আমাদের ইউক্রেনের জন্য এবং ফলত সমগ্র ইউরোপের জন্য নির্ভরযোগ্য ও দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা দরকার।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত টানা ৯৩৭ দিনের মতো চলছে দেশ দুটির সংঘাত। এতে দুই পক্ষের বহু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে যুদ্ধ বন্ধে এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ নেই, উল্টো পূর্ব ইউক্রেনে দেশ দুটির মধ্যে সংঘাতের পরিমাণ অনেক বেড়েছে।