লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) হিজবুল্লাহর সদর দপ্তর লক্ষ্য করে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হামলা চালানো হয়। এরপর যত সময় গড়াচ্ছে ততই তার নিহত বা আহত হওয়ার বিষয়টি জোরালো হচ্ছে।
৩২ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীটিকে আজকের সুসংহত অবস্থানে এনেছেন হাসান নাসরুল্লাহ। মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব ব্যাপক। ফিলিস্তিন ভূখণ্ড গ্রাস করার ইসরায়েলের খায়েশ পূরণে অন্যতম বাধা হাসান নাসরুল্লাহ ও তার বাহিনী। যদি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মাথাব্যথার অন্যতম কারণ নাসরুল্লাহ আহত বা নিহত হন তবে সেটি এ যাবৎকালে ইসরায়েলের বড় বিজয় হবে।
বিমান হামলার বেশ কয়েক ঘণ্টা পার হলেও কোনো পক্ষ হাসান নাসরুল্লাহর ব্যাপারে স্পষ্ট বিবৃতি দেয়নি। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী শুক্রবার সন্ধ্যায় লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। তারা হিজবুল্লাহর সদর দপ্তরে সফল আঘাত করেছে। মুহুর্মুহু গোলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা কম্পাউন্ড। একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা টাইমস অব ইসরায়েলকে নিশ্চিত করেছেন যে, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে লক্ষ্য করেই হামলা করা হয়েছে। তিনি সেই সময়ে কমান্ড সেন্টারে ছিলেন। এমনটি তারা বিশ্বাস করেন। কারণ, নাসরুল্লাহকে হত্যার সিদ্ধান্তের পর গত সপ্তাহ থেকে তার গতিবিধি নির্ভুলভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হামলাটি হয়।একাধিক হিব্রু মিডিয়ার প্রতিবেদনে নাসরুল্লাহর ভাগ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, হামলায় ভূগর্ভস্থ সদর দপ্তরও অক্ষত নেই। এ রকম একটি বড় হামলার পর তিনি সেখান থেকে জীবিত বেরিয়ে আসবেন; তা কল্পনা করা খুব কঠিন।রয়টার্স খুব চেষ্টা করেও নাসরুল্লাহ বা তার সঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। তাদের টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়া গেছে। গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকেও নাসরুল্লাহর জীবিত থাকা নিয়ে অফিশিয়াল বিবৃতি আসেনি। তবে ইরানের সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজ নাসরুল্লাহ জীবিত ও অক্ষত আছেন বলে দাবি করেছে। একই সময় ইরানের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেনি। ইরান নাসরুল্লাহর অবস্থান যাচাই করে দেখছে বলে ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ওই খবরে নাসরুল্লাহর যে ছবি ব্যবহার করছে, তা শোকের আবহ দিচ্ছে।
এদিকে নাসরুল্লাহর মৃত্যুর সংবাদ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি নিহতের খবরে সিরিয়ার ইদলিবে মিষ্টি বিতরণ করেছেন স্থানীয় মানুষ। এক ভিডিওতে তাদের উল্লাস করতে দেখা যায়।
শুক্রবারের হামলায় নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছে কি না জানতে চাইলে ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমি মনে করি, এ ব্যাপারে এখন কথা বলা খুব তাড়াতাড়ি বলে গণ্য হবে। আমরা সফল হলে কখনো কখনো তারা (ইসরায়েলের শত্রু) সত্য গোপন করে।’