শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৪ অপরাহ্ন

২০২৪ সাল বিশ্বের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ!

bornomalanews
  • Update Time : রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১১ Time View

২০২৪ সাল বিশ্বের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের ৬০তম চতুর্থ বার্ষিক নির্বাচন। লড়াই হবে প্রধানত দুই দলের প্রতীক হাতি ও গাধার মধ্যে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে নানা জল্পনাকল্পনা, হিসাব-নিকাশ ও ছক কষাকষি। মনে করা হচ্ছে, এ নির্বাচন বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তির গণতন্ত্রকে বড় পরীক্ষায় ফেলতে পারে।

সবারই অনুমান, বিশ্ব এখন একটা আগ্নেয়গিরি চূড়ায় বসে আছে। একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ যেকোনো মুহূর্তে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি করতে পারে। তাতে পৃথিবী নিমিষেই দগ্ধ হতে পারে। এমনকি তা মানব সভ্যতার সমাপ্তিও ঘটাতে পারে। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতা, ইউক্রেনের যুদ্ধ, মিয়নামারে জাতিগত সশস্ত্র সঙ্ঘাত থেকেই ভয়াবহ সেই অগ্ন্যুৎপাতের সূচনার আশঙ্কায় প্রহর গুনছে বিশ্বের আট শত কোটির বেশি আদম সন্তান। এসব সঙ্কটের মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অগ্রভাগে।নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান এই দুই দল থেকে প্রার্থী হয়েছেন ক্ষমতাসীন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প হলেন দেশটির ইতিহাসে প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট, যাকে নানা ফৌজদারি অপরাধের দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে এবং একাধিক মামলায় শাস্তিও হয়েছে। সেই সাথে তাকে জড়িয়ে রয়েছে নারী কেলেঙ্কারির বহু অভিযোগ।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪
আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রথাগতভাবে ৫ নভেম্বর, ২০২৪ বুধবারে অনুষ্ঠিত হবে। ভোটাররা একই সাথে চার বছর মেয়াদের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুনর্নির্বাচনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে। ফলে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। য্ক্তুরাষ্ট্রের শিকাগোয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চার দিনের জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে গত ২২ আগস্ট ২০২৪ রাতে বর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা দলীয় মনোনয়ন গ্রহণ করেন। মনোনয়ন গ্রহণ করে সম্মেলনে দেয়া ভাষণে কমলা বলেন, তিনি সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হবেন। কমলা বিজয়ী হলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট এবং সে দেশের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট। কমলা হ্যারিস ২০২০ ডেমোক্র্যাটিক দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হতে মনোনয়ন চেয়েছিলেন; কিন্তু প্রথম দিকেই তিনি নির্বাচনী রেস থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। বাইডেন তাকে ২০২০ সালের আগস্টে তার রানিংমেট হিসেবে নির্বাচিত করেন এবং দলের টিকিটে নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হন।

উল্লেখ্য, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সবসময় ২০ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল ভবনের প্রাঙ্গণে বাইবেল স্পর্শ করে শপথ গ্রহণ করেন। ক্যাপিটল ভবন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন।

য্ক্তুরাষ্ট্রের ৪৯তম ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা দেবী হ্যারিস একজন আমেরিকান রাজনীতিবিদ এবং অ্যাটর্নি। তিনি মার্কিন ইতিহাসে প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট, একই সাথে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান এবং প্রথম এশিয়ান-আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য কমলা ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হিসেবে কাজ করেন। ২০২১ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন।

কমলা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন এবং পরে হেস্টিংস কলেজ অব দ্য ল, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তার কর্মজীবন শুরু হয় আলমেদা কাউন্টি জেলা অ্যাটর্নি অফিসে। হ্যারিসের জন্ম ১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে। তার মা শ্যামলা গোপালন একজন ভারতীয় তামিল জীববিজ্ঞানী। বাবা ডোনাল্ড জে হ্যারিস স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির ইমেরিটাস অধ্যাপক, যিনি ১৯৬১ সালে ইউসি বার্কলেতে স্নাতক অধ্যয়নের জন্য ব্রিটিশ জ্যামাইকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের জীবনালেখ্য
ডোনাল্ড ট্রাম্প (জন্ম জুন ১৪, ১৯৪৬) একজন আমেকিরান রাজনীতিবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও ব্যবসায়ী, যিনি ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ট্রাম্প ১৯৬৮ সালে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করেন। তার বাবা তাকে ১৯৭১ সালে পারিবারিক রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সভাপতি করেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে উপর্যুপরি ব্যবসায়িক ব্যর্থতার পর তিনি পার্শ্ব উদ্যোগগুলো চালু করেন, বেশির ভাগই ট্রাম্পের নামে লাইসেন্স করে। ২০০৪ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তিনি রিয়েলিটি টেলিভিশন সিরিজ দ্য অ্যাপ্রেন্টিস সহ-প্রযোজনা ও হোস্ট করেন। তিনি এবং তার ব্যবসা চার হাজারটির বেশি আইনি পদক্ষেপে বাদি বা বিবাদি হয়েছেন, যার মধ্যে ছয়টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়েছে। তা ছাড়া তিনি হয়তো একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যার যৌন কেলেঙ্কারি দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত পৌঁছেছে। তার দল রিপাবলিকানদের মাঝে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়।

১৯৭৭ সালে, ট্রাম্প চেক মডেল ইভানা জেলনিকোভাকে বিয়ে করেন। তাদের তিনটি সন্তান ছিল; ডোনাল্ড জুনিয়র (জন্ম ১৯৭৭), ইভানকা (১৯৮১) ও এরিক (১৯৮৪)। পরে অভিনেত্রী মারলা ম্যাপলসের সাথে ট্রাম্পের সম্পর্কের কারণে ১৯৯০ সালে এই দম্পিতির বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। ট্রাম্প ও ম্যাপলস ১৯৯৩ সালে বিয়ে করেন এবং ১৯৯৯ সালে তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। তাদের একটি কন্যা, টিফানি (জন্ম ১৯৯৩), যাকে ক্যালিফোর্নিয়ায় ম্যাপলস বড় করেছেন। ২০০৫ সালে, ট্রাম্প স্লোভেনীয় মডেল মেলানিয়া নাউসকে বিয়ে করেন। তাদের একটি ছেলে, ব্যারন (জন্ম ২০০৬) রয়েছে। পণ্ডিত ও ইতিহাসবিদরা ট্রাম্পকে আমেরিকার ইতিহাসের অন্যতম নিকৃষ্ট রাষ্ট্রপতি হিসেবে স্থান দিয়েছেন। তিনি জীবনের অনৈতিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগও রয়েছে।

ট্রাম্প ২০২০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বাইডেনের কাছে হেরে গেলেও তা অস্বীকার করেছিলেন। তিনি বাইডেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক নির্বাচনী জালিয়াতির দাবি করেন এবং ফলাফল উল্টানোর চেষ্টা করেন। ৬ জানুয়ারি, ২০২১ সালে তিনি তার সমর্থকদের ইউএস ক্যাপিটলে মার্চ করার আহ্বান জানান।

নির্বাচন প্রক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচন অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। বিশ্বের আর কোনো দেশে এমন জটিল পদ্ধতির নজির নেই। দেশের সাধারণ ভোটাররা সরাসরি ভোট দেন বটে, তবে সে ভোটে প্রেসিডেন্ট ও তার রানিং মেট ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। উভয়কেই পরে পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতে হয়। এই নির্বাচন প্রক্রিয়া যতটুকু বোঝা গেছে তার একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়ার চেষ্টা করা হলো।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট এই দুই পদের নির্বাচন একই সাথে একই প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপে সারা দেশের জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে উভয় দলের মনোনীত নির্দিষ্ট সদস্যদের নির্বাচন করা হয়। তাদের বলা হয় ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্য। তারা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হলে তার পরের ধাপে ইলেক্টররা নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যের রাজধানীতে মিলিত হয়ে আলাদা আলাদা ব্যালটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টকে ভোট দিয়ে থাকেন। সেই ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

সংবিধান অনুযায়ী, চার বছর পরপর নির্বাচনী বছরের ০১ নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার হলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট দিন ধার্য করা আছে। এই দিন জনগণ যে ভোট দিয়ে ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের নির্বাচন করেন। ওয়াশিংটন ডিসি ও ৫০টি অঙ্গরাজ্যের জনগণ প্রত্যক্ষ ভোটে যে ৫৩৮ জন ইলেক্টর নির্বাচন করেন তাদের ইলেক্টোরাল ভোট বলা হয়। পপুলার নির্বাচন দিবসের পরের মাসে, অর্থাৎ ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বুধবারের পর প্রথম সোমবারে প্রতি অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টোরালরা নিজ নিজ রাজধানীতে মিলিত হয়ে আলাদা আলাদা ব্যালটে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টকে নির্বাচনের জন্য ভোট দেন।

৫০টি অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টেরাল ভোটারের সংখ্যা নিচে সন্নিবেশিত করা হলো :
আলবামা-৯, আলাস্কা-৩, আরিজোনা-১১, আরকানসাস-৬, ক্যালিফোর্নিয়া-৫৫, কলোরাডো-৯, কানেক্টিকাট-৭, ডেলাওয়ের-৩, ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া-৩, ফ্লোরিডা-২৯, জর্জিয়া-১৬, হাওয়াই-৪, উইডাহো-৪, ইলিনয়-২০, ইন্ডিয়ানা-১১, আইওয়া-৬, কানসাস-৬, কেন্টাকি-৮, লুইজিয়ানা-৮, মেইন-৪, ম্যারিল্যান্ড-১০, ম্যাসাচুসেটস-১১, মিশিগান-১৬, মিনেসোটা-১০, মিসিসিপি-৬, মিসৌরি-১০, মনটানা-৩, নেব্রাস্কা-৫, নেভাদা-৬, নিউ হ্যাম্পশায়ার-৪, নিউ জার্সি-১৪, নিউ মেক্সিকো-১৪, নিউ ইয়র্ক-২৯, নর্থ ক্যারোলিনা-১৫, নর্থ ডাকোটা-৩, ওহাইও-১৮, ওকলাহোমা-৭, অরেগন-৭, পেনসিলভানিয়া-২০, রোডস আইল্যান্ড-৪, সাউথ ক্যারোলিনা-৯, সাউথ ডাকোটা-৩, টেনেসি-১১, উইকনসিন ও উইয়োমিং-৩। রাজ্যগুলোতে এ ভোটারের সংখ্যা হেরফের হতে পারে জনসংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি পেলে। ১৯১৩ সালে এমন ডিস্ট্রিক্টের সংখ্যা ৪৩৫ নির্দিষ্ট করা হয়। আগেই বলা হয়েছে, জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে ইলেক্টোরাল কলেজের সংখ্যা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মোট ইলেক্টোরাল ভোটারের সংখ্যা ৫৩৭ ছিল এবং ১৯৬৪ সাল থেকে এ সংখ্যা ৫৩৮। এর মধ্য থেকে ২৭০ বা তার চেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীই প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।

ইলেক্টর মনোনয়ন পদ্ধতি
ইলেক্টর মনোনয়নের বিভিন্ন পদ্ধতি থাকলেও সচরাচর প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় পলিটিক্যাল পার্টিগুলো প্রতি অঙ্গরাজ্যে স্বদলের আস্থাভাজন ব্যক্তিদের ইলেক্টর হিসেবে মনোনয়ন দেন। মনোনীত ইলেক্টররা বিজয়ী হলে নিজ নিজ প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকেই ভোট দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকেন। তবে এর ব্যত্যয় হয়নি এমন নয়।

প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করাই হলো এই ইলেক্টোরাল ভোটারদের একমাত্র কাজ। কোনো কোনো নির্বাচনে দেখা গেছে, পপুলার ভোট বেশি পেলেও ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের ভোট কম পাওয়ায় প্রার্থী হেরে যান। যেমন বিল ক্লিটনের স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন পপুলার ভোট বেশি পেয়েছিলেন; কিন্তু ইলেক্টোরাল ভোট কম পাওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হেরে যান। নির্বাচনের এই প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘ দিন থেকেই বিতর্ক আছে। তবে জনসংখ্যার দিক থেকে ছোট রাজ্যগুলোর স্বার্থ বিবেচনা করে এই পদ্ধতি এখনো বহাল আছে।

প্রথম প্রেসিডেন্ট
জর্জ ওয়াশিংটন (জন্ম ফেব্রুয়ারি ২২, ১৭৩২, মৃত্যু ডিসেম্বর ১৪, ১৭৯৯) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট। তিনি আমেরিকার স্বাধীনতাযুদ্ধে কন্টিনেন্টাল আর্মির সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রধান বলে উল্লেখ করা হয় এবং তিনি তার জীবদ্দশায় এবং এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনক হিসেবে পরিচিত। ১৭৮৩ সালে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর, ওয়াশিংটন ক্ষমতা দখল না করে সর্বাধিনায়ক পদ থেকে অব্যাহতি নেন, যা মার্কিন গণপ্রজাতন্ত্র প্রণয়নে তার অঙ্গীকারের প্রমাণ।

বয়স্ক প্রেসিডেন্ট
কেউ যদি প্রশ্ন করেন, অভিষেক হওয়ার সময় সবচেয়ে বয়স্ক রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন? উত্তর হবে ডোনাল্ড জন ট্রাম্প। জন্ম ৪ জুন ১৯৪৬। ২০ জানুয়ারি ২০১৭ সালে যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন, তখন তার বয়স ছিল ৭১ বছর সাত মাস ছয় দিন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালে।

প্রথম এবং এ পর্যন্ত একমাত্র অনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট
রিচার্ড মিলহাউস নিক্সনের জন্ম ১৯১৩ সালের ৯ জানুয়ারি। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এর পূর্ব ডোয়াইট ডি আইজেনাওয়ারের নেতৃত্বাধীন ১৯৬১ সাল অবধি ৩৬তম ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। নিক্সনের দ্বিতীয় দফা ক্ষমতাকালীন মেয়াদ ছিল অসমাপ্ত। কারণ তিনিই দায়িত্ব থেকে পদত্যাগকারী একমাত্র মার্কিন রাষ্ট্রপতি, তিনি ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে (ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ ও ন্যায়বিচারে বিমুখতা) অভিযুক্ত হয়ে ১৯৭৪ সালে পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের আগে তার (রানিংমেট) ভাইস প্রেসিডেন্ট এগনিউ তার আয়কর কেলেঙ্কারির জন্য তাকে পদত্যাগ করতে হয়। তখন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেন জেরাল্ড রুডলফ ফোর্ডকে। ফোর্ডের জন্ম ১৯১৩ সালে। কেলেঙ্কারির জন্য নিক্সনের বিদায়ের পর স্বাভাবিকভাবেই ফোর্ড প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত ৩৮তম প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন।

সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদের প্রেসিডেন্ট
নির্বাচিত হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। তিনি ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। রুজভেল্ট টানা চারবার ওভাল অফিসে নির্বাচিত হন। রুজভেল্ট দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কারণ ১৯৫১ সালে মার্কিন সংবিধানের ২২তম সংশোধনী অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতিদের জন্য মেয়াদের কোনো সীমাবদ্ধতা ছিল না। সংশোধনীর আগে, প্রেসিডেন্টরা শুধু ঐতিহ্যের দ্বারা সীমাবদ্ধ ছিলেন এবং দু’টি মেয়াদে দায়িত্ব পালনের নজির ছিল। এই রীতি জর্জ ওয়াশিংটন প্রতিষ্ঠা করেন। রুজভেল্টের চারমেয়াদি প্রেসিডেন্সি তার জনপ্রিয়তা ও গ্রেট ডিপ্রেশন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার নেতৃত্বের কারণে সম্ভব হয়েছিল। কিছু সমালোচক যুক্তি দেন যে, রুজভেল্টের দীর্ঘমেয়াদ দেশের জন্য ক্ষতিকর এবং অগণতান্ত্রিক ছিল। পরে সংবিধানের ২২তম সংশোধনী অনুমোদন করা হয়, যাতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মেয়াদ চার বছর করে সর্বাধিক দুই মেয়াদে সীমিত করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 bornomalanews24.com
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102