ইউরোপ ক্লাব ফুটবলে নিজের পায়ের যাদুকরী ছন্দ প্রদর্শন করে ইতিমধ্যে শুনাম কুড়িয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ২৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া। তাকে ২০২২-২৩ মৌসুমে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা ৪৮ মিলিয়ন ইউরো এবং ১২ পরবর্তীতে ১২ মিলিয়ন ইউরো যোগ করে দলে ভেড়ায় তাকে। কাতালান শিবিরে যোগ দেওয়ার পর থেকেই ফুটবল ভক্তদের কাছে বেশ পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি।
এছাড়া চলতি মৌসুমে বার্সেলোনার পাওয়া দুর্দান্ত সাফল্যের পেছনেও তার অবদান রয়েছে অনেক। তবে অজানা ছিলো তার ফুটবলে উঠে আসার গল্প। সম্প্রতি যা সামনে এনেছে ব্রাজিলিয়ান গণমাধ্যম ইউওএল ইস্পোর্তে। যেখানে রাফিনিয়া শুনিয়েছেন তার খাদ্য অভাবে পথে পথে ভিক্ষা করার কথা।
ব্রাজিলের জনসংখ্যার একতৃতীয়াংশ অর্থনৈতিক ভাবে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর। তাদের মধ্যে রয়েছে রাফিনিয়ার পরিবার। আর্থিকভাবে তারা খুব বেশি সাবলম্বি ছিলো না। তাই মাঠে ফুটবল অনুশীলনের পর তাকে পথে পথে খাবারের জন্য ভিক্ষা করা লাগতো। এ প্রসঙ্গে ব্রাজিলিয়ান এই ফরোওয়ার্ড বলেন, ‘ছোটো বেলায় আমি খুব বেশি ক্ষুধার্ত থাকতাম না, কারণ আমার বাবা-মা কষ্ট করে হলেও কখনও বাড়িতে খাবারের অভাব হয়নি। তবে ভালো খাবারের অভাব ছিলো যা উঠতি বয়সী তরুণদের জন্য প্রয়োজন। তাই প্রশিক্ষণের পর আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে লোকজনকে বলতাম আমার জন্য কিছু খাবার বা নাস্তা কিনে দিতে। কিছু লোক আমাকে সাহায্য করবে, অন্যরা সরাসরি আমাকে বকাঝকা দিয়ে তাড়িয়ে দিতো। তখন আমার বয়স ছিল ১২ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে।’
ব্রাজিলে ফুটবল খেলাকে নিজেদের আদালা এক ধর্মের মর্যাদা দেওয়া হয়। তাদের ঘরে ঘরে খাবার না থাকলেও রয়েছে ফুটবলার। দেশটির অলিতে-গলিতে খেলেই বিশ্বফুটবলে উঠে এসেছে বিভিন্ন কিংবদন্তী ফুটবলার। তবে ব্রাজিলিয়ানদের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত মাঠ থেকে সুখকর বিদায় নিতে পারেনা। অনেকেতো তারকা খ্যাতি পাওয়ার আগেই মাদক কিংবা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে হারিয়ে যায়। রাফিনিয়াও শুনিয়েছেন এমন ভাবে হারিয়ে যাওয়া তার কিছু বন্ধুর গল্প। যারা কিনা তার মতে তার থেকে ১০ গুনবেশি ভালো খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বে সাড়া ফেলতে পারতো।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ব্রাজিলের একটি কঠিন বাস্তব কথা বলি। আমি যেই এলাকায় বেড়ে উঠেছি সেই এলাকা বসবাস করে ফুটবলের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখা কষ্টকর। আমি রেস্টিঙ্গা (পোর্তো আলেগ্রেতে পাশের একটা এলাকা) থেকে এসেছি। সেখানে সফলার পথ অনুসরণ করা এবং পথভ্রষ্ট না হওয়া অনেক কঠিন। কারণ সেখানে অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ আসে, এবং অনেক আছে। আর সেখানেই মানুষ হারিয়ে যায়। তবে আমি কখনও আমার লক্ষ্য থেকে সরে যাইনি, কিন্তু আমি একজন সাক্ষী ছিলাম, আমি হারিয়ে যাওয়া লোকদের সাথে হেঁটেছি।’ রাফিনিয়া আরও বলেন, ‘শহরটির অপরাধ জগতে এবং মাদক ব্যবসায় অনেক বন্ধুকে হারিয়েছি। এমন এমনও অনেক বন্ধু ছিলো, যারা আমার চেয়ে ১০ গুণ ভালো খেলতো এবং তারা যদি তাদের লক্ষ্যে টিকে থাকতো তাহলে এখন বিশ্বের সেরা কোনো ফুটবল ক্লাবে থাকতে পারতো।’
এসময় নিজেকে কিভাবে অপরাধ এবং মাদক জগৎ থেকে সরিয়ে রেখেছিলেন তিনি তা জানিয়ে বলেন, ‘আমার বন্ধুদের অসৎ পথে তলিয়ে যাওয়া কাছাকাছি থেকে দেখার ফলেই আমি আমার লক্ষ্য ঠিক ঠাক ধরে রাখতে পেরেছি। আমি খুব ছোটবেলা থেকেই জানতাম আমি কী চাই, আমি চাইতাম একজন ফুটবলার হিসেবে গড়ে উঠতে। জন্মস্থান ছেড়ে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাহিরে পাড়ি জমানো আমার জন্য অনেক বড় আত্মত্যাগ। কিন্তু আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল আরও বড়। আমি বিচ্যুত হইনি। আজ যদি তারা (সমর্থকরা) ফুটবলে আমার ‘জাদুকরী প্রদর্শন’ নিয়ে কথা বলে, আমি বলি… এটাই আসল জাদু।’