জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বাড়ছে সংশয়: নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি, বিএনপি ও অন্যান্য দলগুলোর অবস্থান স্পষ্ট নয়, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গত কয়েকদিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। নির্বাচনের দিন তারিখ ও পদ্ধতি নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট বার্তা না পাওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে উদ্বেগ ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) এখনও নির্বাচনের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো অবস্থান নেয়নি, যার কারণে নানা রাজনৈতিক দল নানা ইস্যু সামনে নিয়ে আসছে। গত ১৩ জুন লন্ডনে অনুষ্ঠিত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কিছু রাজনৈতিক দল এই বৈঠককে ইতিবাচকভাবে নেয়নি, এবং তাদের দাবি, এসব বৈঠকের মাধ্যমে নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি করা হচ্ছে। তারা বলছে, নির্বাচন হবে না, যদি না বিচার ও সংস্কারের কাজ শেষ হয়। অন্যদিকে, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি করে কিছু দল পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। তাদের মতে, নির্বাচন পরিচালনায় পরিবেশ তৈরি না হলে, গণতান্ত্রিকভাবে সঠিক নির্বাচন সম্ভব নয়। বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমান বলেছেন, “নিত্যনতুন ইস্যু যদি আমরা সামনে নিয়ে আসি, ষড়যন্ত্রকারীরা আবারও মাথা চাড়া দেওয়ার সুযোগ পাবে।” তিনি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনকে বাংলাদেশের জন্য বিভক্তিমূলক এবং অস্থিতিশীল সরকার তৈরির কারণ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি রাজনৈতিক নেতাদের এমন পদ্ধতি গ্রহণের আগে আরও ভেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই বৈঠককে মেনে নিতে পারেনি এবং তারা নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছে। এনসিপির নেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, “বিচার ও সংস্কারের আগে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হবে না।” জামায়াতে ইসলামীও নির্বাচন হতে গেলে আগে পরিবেশ তৈরি করার দাবিতে সরব হয়েছে। তাদের দাবি, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হতে পারে না। এছাড়া, এনসিপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার দাবি জানানো হয়েছে। এমনকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেশ করে ঐক্যবদ্ধভাবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি করা হয়েছে। এদিকে, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো নির্দিষ্ট ঘোষণা আসেনি। ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর, নির্বাচন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের দাবি উঠছে, যার মধ্যে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ অন্যতম। তবে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, “দেশের মানুষ সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনে অভ্যস্ত, আর সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চেয়ে যারা জামানত বাজেয়াপ্ত হতে পারে, তারাই এই দাবি করছে।” সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন এবং অধ্যাপক ড. ইউনূসের মধ্যে বৈঠকও এই ইস্যুতে কিছুটা অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। সিইসির সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হওয়ার পরেও নির্বাচনের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট বার্তা প্রদান করা হয়নি, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এভাবে চলতে থাকলে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা আরও বাড়বে এবং আগামী দিনগুলিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।