বাংলাদেশের হাইকোর্ট দেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপের পক্ষে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সাংঘর্ষিক এবং বাতিল ঘোষণা করেছে। মঙ্গলবার, সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ১৩৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরী পরিচালিত, পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের বৈধতা নিয়ে পৃথক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় দেয়। সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারাসহ ৭ক, ৭খ, ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়। রায়ে আদালত আরও উল্লেখ করেছে যে, পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের পুরোটা বাতিল করা হচ্ছে না, বরং বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আগামী জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে, জাতীয় সংসদ আইন অনুযায়ী, জনগণের মতামত নিয়ে সংশোধন, পরিমার্জন এবং পরিবর্তন করতে পারবে। এছাড়া, গণভোটের বিধানও বিলুপ্ত করা হয়েছে। এই বিধান সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে ছিল এবং এটি ১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছিল। পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় এটিও বাতিল ঘোষণা করা হয়। এর ফলে, দ্বাদশ সংশোধনী আইনের ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল হয়েছে। ২০১১ সালের ৩০ জুন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পঞ্চদশ সংশোধনী আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হয় এবং ৩ জুলাই এর গেজেট প্রকাশ করা হয়। তবে, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তি গত বছরের ১৮ আগস্ট রিট করে, যার পর প্রাথমিক শুনানি শেষে গত বছরের ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট রুল জারি করেছিল। এই রায়ে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী আইনি আলোচনা সমাপ্ত হলো, এবং দেশের আইনগত ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিচারিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।