ওয়াশিংটন, সোমবার – মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সই করা নতুন নির্বাহী আদেশের পর মুসলিমপ্রধান বা আরব দেশগুলোর নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর, তিনি একাধিক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন, যার মধ্যে অন্যতম এই আদেশটি।
এই নতুন নির্বাহী আদেশের আওতায়, এমন দেশগুলোর নাগরিকদের ভিসা-সংক্রান্ত অনুরোধ প্রত্যাখ্যান এবং যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের অপসারণের সুযোগ আরও বিস্তৃত হতে পারে। বিশেষত, যে দেশগুলোর নিরাপত্তা তল্লাশি বা যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে, তাদের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
এডিসি (আমেরিকান-আরব অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটি) এর নির্বাহী পরিচালক আবেদ আইয়ুব বলেন, “এই আদেশটি বিপজ্জনক এক নজির সৃষ্টি করেছে, যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ভিত্তিতে যে কোনো নাগরিককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ডেমোক্রেটিক প্রশাসন ক্ষমতায় এলে, ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধেও এই পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
এছাড়া, ট্রাম্পের প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব, সংস্কৃতি, সরকার বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব পোষণকারীদের ক্ষেত্রে ভিসা বা প্রবেশাধিকার বাতিল করার প্রক্রিয়া চালু করেছে। এই আইন নতুনভাবে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে যেখানে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে দেওয়া ভিসাগুলো বাতিল হতে পারে।
নতুন আদেশের ফলে, যেসব দেশকে “ত্রুটিপূর্ণ” হিসেবে চিহ্নিত করা হবে, তাদের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর আংশিক বা পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এসব দেশে ফিলিস্তিন, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ অন্যান্য দেশ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, যেগুলো ট্রাম্প তার প্রচারণার সময় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেছিলেন।
এডিসি এবং অন্যান্য নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এই নির্বাহী আদেশটি মার্কিন নাগরিকদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখার নামে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের অধিকারকে লঙ্ঘন করবে। ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিল (এনআইএসি) এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন আদেশটি “শিক্ষার্থী, কর্মী এবং শিক্ষা আদান–প্রদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা প্রত্যাখ্যানের সুযোগ তৈরি করবে,” যা যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এডিসি এক নতুন ২৪ ঘণ্টার হটলাইন চালু করেছে, যার মাধ্যমে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার শিকার ব্যক্তিরা সহায়তা চাইতে পারবেন। সংগঠনটি এখনো ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে আইয়ুব বলেন, “এই আদেশের মাধ্যমে মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে, এমনকি রাজনৈতিক বা সামাজিক মতামত প্রকাশ করলে, তা ভিসা বাতিল বা দেশে ফেরত পাঠানোর কারণ হতে পারে।”
এদিকে, ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন যে, তিনি “বিশেষ দেশ ও বিশেষ মতাদর্শের” মানুষের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ফিলিস্তিন, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ কিছু দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নতুন নির্বাহী আদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অভিবাসন নীতির ভবিষ্যতেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।