দেশের আপামর শ্রোতাদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় একজন গায়ক আসিফ আকবর। সংগীতাঙ্গনে তাকে বলা হয় বাংলা গানের যুবরাজ। প্রতিবাদী ও স্পষ্টবাদী বলেও পরিচিত তিনি। রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে গান গাওয়ার সুযোগ পাননি অসংখ্য হিট গানের এই গায়ক। এমনকি তার গাওয়া কোনো গানও বাজানো হতো না এ দুই প্রচারমাধ্যমে।
এখন আসিফ আকবরের কাছে নিয়মিত ফোন আসছে বেতার ও বিটিভি থেকে। তাকে ঘিরে সাজানোর পরিকল্পনা করছে নতুন নতুন সংগীতানুষ্ঠান! কিন্তু আসিফ আকবর তো অন্য অনেকের মতো নন। বরাবরই প্রতিবাদী, অভিমানীও বটে। তাই এসব ফোন আর পরিকল্পনার গল্প শুনে কাতর হননি তিনি। বরং বিনয়ের সঙ্গে ফেরালেন সেই প্রস্তাব। জানান দিলেন, ২৪ বছরের ক্যারিয়ারের ১৮ বছরই কেটেছে কালো তালিকায়। বাকিটাও কাটুক না হয় এমন।
আসিফ আকবর বলেন, ‘বাংলাদেশ বেতারের একজন কর্মী আমাকে দাওয়াত দিয়েছে তাদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। মেয়েটির বিনয়ী প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতেই হলো। আরও কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী বেতারে আছেন, যারা বিগত ষোল বছর আমার গান চালাতে চাইত, পারত না- এখন পারছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকেও ফোন পেয়েছি। প্রোগ্রাম প্রডিউসার বলেছে, আপনাকে নিয়ে নতুনভাবে শুরু করতে চাই। তাকেও বিনয়ের সাথে না করে দিয়েছি। আমি নিকট অতীতে দেখেছি বিটিভিতে আমার গান চলেছে ঠিকই, শুধু নামটি বদলে দিয়েছে।’
শুধু সরকারি দুই মাধ্যম নয়, আসিফ আকবর স্পষ্ট কণ্ঠে জানালেন আরও একটি বড় সিদ্ধান্ত। শুধু বিটিভি নয়, অন্য কোনো টেলিভিশন চ্যানেলেও গান না গাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
আসিফ লেখেন, ‘চব্বিশ বছরের ক্যারিয়ারে (ওয়ান-ইলেভেনসহ ) জীবন থেকে চলে গেছে আঠারো বছর। যৌবন পেরিয়ে এখন আমি মধ্যবয়সি। ফাঁকে ফাঁকে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে গাইতাম, এখন আর গাই না, সেখানেও আর কখনো গাইব না। এসব নিয়ে আর কষ্ট পাই না। দীর্ঘদিনের অনভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সেই মাথা ভরা চুল আর নেই, সাদাও হয়ে গেছে কিছু, চোখের দৃষ্টিও ঝাপসা হয়েছে একটু। তবুও রাষ্ট্রকে ধন্যবাদ আমাকে দেশে থাকতে দেওয়ার জন্য। গান গাওয়া আমার পেশা, মঞ্চে গাইব আর অল্প কয়েকটা বছর। কোটি মানুষ আমাকে ভালোবাসে, তাদের সামনে গাইবার ইচ্ছা আছে, নিশ্চয়ই তারাও বঞ্চিত হয়েছে! বেতার/বিটিভিতে আমার জায়গায় সুযোগ পাবে অন্য কেউ একজন, সেখানেই আনন্দ খুঁজে নেব।’উল্লেখ্য, বাংলাদেশ অডিও ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসে সর্বোচ্চ সফল আধুনিক গানের শিল্পী আসিফ আকবর। যিনি বিএনপি সমর্থন করেন বলে রাজনৈতিক বঞ্চনার শিকার হয়েছেন গত ১৮ বছর ধরে।