জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে যতই সুন্দর সুন্দর কথা বলা হোক, ততেও রাষ্ট্রের রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার (০১ মার্চ), রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে, ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (এনআরএফ) আয়োজনে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ত্যাগ ও নেতৃত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং ‘নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
রুহুল কবির রিজভী, তার বক্তৃতায়, একটি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, “আজ কিছু বুদ্ধিজীবী বলছেন, ক্ষমতায় থেকেই তো বিএনপির জন্ম হয়েছে। তবে, তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন, এসব কথা বলে তারা এক নতুন রাজনীতির গল্প তৈরি করছেন। তাঁরা এরশাদ বা জিয়াউর রহমানের নাম ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আনছেন, অথচ বাস্তবতা হলো, জিয়া ছিল অন্য মাত্রার এক নেতা, যে একটি নতুন রাজনৈতিক দর্শন দিয়েছিল। যারা নতুন দল গঠন করেছেন, তারা অনেক ভালো কথা বলেছেন, কিন্তু কোথায় পলিটিক্যাল ফিলোসফি? কোথায় সেই গভীর রাজনৈতিক দর্শন?”
এনসিপির আত্মপ্রকাশের সঙ্গে মিলিয়ে তিনি আরও বলেন, “জিয়াউর রহমান যে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, তা নিছক কাকতালীয় নয়। তিনি গণতান্ত্রিক শাসক উৎখাত করে ক্ষমতায় আসেননি। শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন। কিন্তু জিয়া, তার দৃষ্টিভঙ্গিতে, গণতন্ত্রের আলোর মশাল জ্বালিয়েছিলেন।”
এছাড়া, তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের আলো কেবল বাকশালের অন্ধকার গুহা থেকে বের হয়ে আসেনি, সেটা সম্ভব হয়েছিল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে। রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা ও বহুমতের যে জায়গা তৈরি হয়েছিল, তা জিয়ার হাত ধরেই সম্ভব হয়েছিল। আর বেগম খালেদা জিয়া, যিনি এই মশালকে নতুন করে জ্বালিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তিনি ৯০-এর দশকে যখন গণতন্ত্র সংকটে পড়েছিল, তখন তা পুনরুদ্ধার করেছিলেন।”
তিনি আরো বলেন, “এটি কোনো সাধারণ রাজনীতির গল্প নয়, এটি ছিল এক সংগ্রাম, যেখানে ২০০৬ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত গণতন্ত্র রক্ষার জন্য অসংখ্য ত্যাগের পেছনে যে প্রেরণা ছিল, তা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বেই সম্ভব হয়েছিল। সালাহউদ্দিন আহমেদ, যিনি দু’মাস অন্ধকার কারাগারে ছিলেন, তার দুঃখ-দুর্দশা, তা কোন প্রেরণায় হয়েছে? শুধুমাত্র বেগম খালেদা জিয়ার প্রেরণায়।”
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. আনোরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহম্মেদ, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
এটি ছিল একটি মুহূর্ত, যেখানে বিএনপির সিনিয়র নেতা রিজভী শুধু অতীতের রাজনীতির উপর আলোচনার দিকে মনোনিবেশ করেননি, বরং ভবিষ্যতের রাজনীতির জন্য একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন, যেখানে গণতন্ত্র, বহুমত এবং রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা মূল শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।