বহু বছরের রেওয়াজ অনুযায়ী রমজানের প্রথম দিনে বিএনপির নেতারা আলেম-ওলামা এবং এতিমদের সঙ্গে ইফতার করেছেন। এই উপলক্ষে রোববার রাজধানীর লেডিস ক্লাবে দলের পক্ষ থেকে এক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি লন্ডন থেকে সংযুক্ত হন।
ইফতার শুরুর আগে বক্তৃতায় দেশবাসীকে রমজানের শুভেচ্ছা জানান তারেক রহমান। রমজানের শিক্ষা কীভাবে বাস্তবে প্রয়োগ করা যেতে পারে, সে বিষয়ে আলোকপাত করেন তিনি। তিনি বলেন, “যদি আমরা নিজেদের সৎ কাজে উৎসাহিত করতে এবং অসৎ কাজে নিরুৎসাহিত করতে পারি, তবে আমরা সেই সমাজ এবং দেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব, যা আমরা চাই।”
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, রমজান আমাদের শেখায় সংযমী হতে, ধৈর্য ধরতে, এবং কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়। পাশাপাশি, আল্লাহর সৃষ্টি করা সবকিছুর প্রতি যত্ন নেওয়ার শিক্ষাও রমজান আমাদের দেয়। রমজান আমাদের শেখায় আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি মমত্ববোধ ও দয়ালু মনোভাব রাখতে।
তারেক রহমান আলেম-ওলামাদের উদ্দেশে বলেন, “চলুন, আমরা সবাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “যেমন খ্রিষ্টান সম্প্রদায় সারা বিশ্বে একদিন বড়দিন পালন করে, তেমনি আমরা চিন্তা করতে পারি, বাংলাদেশে কি আমরা সারা বিশ্বের সাথে একদিন রোজা এবং ঈদ পালন করতে পারি? এই বৈজ্ঞানিক যুগে এটি সম্ভব কি না, তা নিয়ে ভাবতে পারি।”
অনুষ্ঠানে তারেক রহমান তার মা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “বিএনপির বিরুদ্ধে দেশে এবং বিদেশে একশ্রেণির লোক আলেম-ওলামাদের সাথে দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা করছে।” তিনি সতর্ক করে বলেন, এই বিভেদ শুধু বিএনপির সাথে আলেমদের নয়, বরং এর মাধ্যমে যে ফাটল সৃষ্টি হবে, তার মাধ্যমে বিদেশি শক্তি দেশে প্রবেশ করবে এবং দেশটিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। মির্জা আব্বাস বলেন, “আজকে নতুন স্লোগান (ইনকিলাব জিন্দাবাদ) নিয়ে সবাই সাবধান থাকবেন। এর অর্থ কী? দ্বিতীয় স্বাধীনতা কী? সেকেন্ড রিপাবলিক কাকে বলে? তারা জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, তাই আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ।”
মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন ফার্মগেট ইসলামি মিশন মাদ্রাসা এবং শান্তিনগর বাজার জাতীয় মুসলিম মাদ্রাসার ৮০ জন শিক্ষার্থী। ইফতার শুরুর আগে দেশবাসীর অগ্রগতি এবং শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা কাজী সেলিম রেজা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাওলানা কাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা কাজী আবু, সোবহানবাগ মসজিদের খতিব মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ মসজিদের খতিব মুফতি মহিউদ্দিন এবং মিরসরাই দরবার শরিফের সুফি আব্দুল মোমেন নাছেরী। বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, রফিকুল ইসলাম জামাল, আব্দুল বারী ডেনি জন গোমেজ প্রমুখ।
এই অনুষ্ঠানে এক বিশেষ বার্তা উঠে এসেছে—একতা, শান্তি এবং রমজানের শিক্ষা অনুসরণে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অটুট রাখার সংকল্প।