জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নতুন দিক উন্মোচিত হলো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৪ জন আসামিকে আগামী ৯ এপ্রিল হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছেন—এটা শুধু একটি আইনি সিদ্ধান্ত নয়, বরং একটি জাতীয় শ্রদ্ধা ও দৃষ্টান্ত স্থাপনেরও মুহূর্ত।
রোববার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বে এই আদেশটি দেয়া হয়, যখন আইন ও ন্যায়ের হাত অবশেষে ধরতে চলেছে হত্যাকারীদের। একইসঙ্গে, ট্রাইব্যুনাল ৯ এপ্রিলের মধ্যে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন, যা এই ভয়ানক হত্যাকাণ্ডের সব দিক উন্মোচনে সাহায্য করবে।
এ বিষয়ে প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম মন্তব্য করে বলেন, “২০২৪ সালের জুলাইয়ে শহিদ আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ড দেশের অন্যতম আলোচিত ঘটনাগুলির একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে।” তিনি আরও জানান, “রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগ এবং তাদের সহযোগী শক্তির দ্বারা সাঈদকে পিটিয়ে বের করে দেয়া হয়েছিল। সাঈদ ছিল এক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আন্দোলনকারী—তিনি বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে। কিন্তু তার নীরব প্রতিবাদকে রক্তাক্ত করে তাকে গুলি করা হয়, যা আমাদের মর্মাহত করেছে।”
এ ঘটনার পর, ৪ আসামি ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তাদেরকে ৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রসিকিউটর আরও জানান, “এই মামলার তদন্ত এপ্রিল মাসের মধ্যে সম্পন্ন হতে পারে, যা সম্ভবত এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা সকল ষড়যন্ত্রের চেহারা প্রকাশ করবে।”
এর আগে, ১৩ জানুয়ারি, শহীদ আবু সাঈদের পরিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রাথমিকভাবে ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করে। শহীদ আবু সাঈদের ভাই রমজান এই অভিযোগটি চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে দাখিল করেন।
প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন সাবেক এএসআই আমির হোসেন এবং কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, ছাত্রলীগ কর্মী এমরান চৌধুরী আকাশ এবং আরও অনেকে, যারা এই ঘটনার পেছনে অগ্নি ছড়ানোর মতো ভূমিকা রেখেছিলেন।
প্রসিকিউটর সেই সাথে জানিয়ে দিয়েছেন, অন্য মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার থাকা আসামিদের এই হত্যাকাণ্ডের মামলায় নতুন করে গ্রেফতার দেখানোর জন্য আবেদন করা হবে।
এভাবেই, আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে চলা আইনি প্রক্রিয়া কেবল একটি বিচারিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি আমাদের সম্মান, ন্যায়ের প্রতি নিবেদন এবং স্বাধীনতার প্রতি এক গভীর অঙ্গীকার।