রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) ফেসবুক স্ট্যাটাসে মন্তব্যের জেরে সিনিয়র-জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি এবং মারামারির ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে কিছু শিক্ষার্থী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে ঝামেলা উস্কে দেওয়ার অভিযোগ তুলে মিছিল ও কুশপুত্তলিকা দাহ করে। রবিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিজয়-২৪ হলের ক্যান্টিন সংক্রান্ত একটি ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করাকে কেন্দ্র করে হলটির ৮০ ও ৮১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং ইফতারের পূর্ব পর্যন্ত উত্তেজনা বিরাজ করে।
জানা যায়, ৮১ ব্যাচের শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলাম ত্বোহা শনিবার ফেসবুকে বিজয়-২৪ হলের ক্যান্টিন নিজ ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থীর মাধ্যমে পরিচালনার একটি প্রস্তাবনা দেন। তার পোস্টের কমেন্টে ৮০ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু রায়হান হৃদয় শুধুমাত্র এক ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ক্যান্টিন পরিচালনার বিরোধিতা করেন। পরবর্তীতে রবিবার এ বিষয়টি নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে মতবিরোধ শুরু হয়। একপর্যায়ে ৮১ ব্যাচের মাহবুর ৮০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মারুফ হাসানকে আঘাত করে এবং এরপর উভয়ের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। মুহূর্তেই খবরটি ছড়িয়ে পড়লে দুই পক্ষের শিক্ষার্থীরা বিজয়-২৪ হলে অবস্থান নেয়। এসময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও উভয় পক্ষ নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য, প্রক্টর, প্রভোস্ট সহ শিক্ষকরা এসে তা নিভৃত করে। জুনিয়র মুজাহিদুল ইসলাম ত্বোহা শেকৃবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এ বিষয়ে আবু রায়হান হৃদয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ফেসবুকে মন্তব্যকে কেন্দ্র করে মুজাহিদুল ইসলাম ত্বোহা তার সিনিয়র আমার রুমমেটকে ফোন করে রুম থেকে হলের নিচে নামতে বলে। এ সময় আমি তাকে হুমকি দিচ্ছিস কিনা প্রশ্ন করলে জুনিয়র বলে হা দিচ্ছি তুই নাম। পরে নিচে নামলে ঝামেলা হয়।
আর মারুফ হাসান বলেন, আমার ব্যাচমেটকে জুনিয়র হুমকি দিয়ে নিচে নামতে বলছে বলে আমাদের ডাকলে আমি নিচে নামি। ওদের থামাতে গেলে আমাকে মারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মুজাহিদুল ইসলাম ত্বোহা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমার বাপ-মা তুলে কথা বলায় ভাইয়ের সাথে আমার একটু তর্কাতর্কি হইছে। আর তুই করে সিনিয়রকে হলের নিচে ডাকার কথা স্বীকার করে মাহবুর বলেন, আমি বুঝতে পারিনি উনি সিনিয়র ছিল। আমি কাউকে মারিনি তারাই আমাকে মারছে, আমাকে মারার সময় ভাইদের হাতে লাগতে পারে।
এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ জাহিদুল রহমান বলেন, সিনিয়র জুনিয়রদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ৮১ ব্যাচের যে ছেলে ক্যান্টিনের খাবারে মান নিয়ে মন্তব্য করেছে, তার মন্তব্যে সাথে খাবারের মানের কোন সম্পর্ক নেই। সে আমার সাথে আলোচনা না করেই নিজে ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চেয়ে ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছে। তবে বর্তমানে ক্যান্টিন খুব সুন্দর ভাবেই চালাচ্ছে এবং খাবারের মান যথেষ্ট ভালো আছে।
পরবর্তীতে রাত সাড়ে ৯টায় ইফতারের আগে সংঘর্ষের ঘটনায় শেকৃবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের ইন্ধন আছে দাবি করে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে একটি অংশ তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা দিয়ে মিছিল এবং তার কুশপুত্তলিকা দাহ করে।
এ বিষয়ে শেকৃবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি তো আসলে জানিই না কে কাকে মারছে, শুনলাম সিনিয়রই নাকি জুনিয়রকে মারছে। প্রথমে শুনলাম শিবিরের পোলাপানের সাথে ঝামেলা আবার শুনি ময়মনসিংহের সাথে আবার শুনি বগুড়ার সাথে আরেকবার শুনি ব্যাচের পোলাপান। ওখানকার সিসি ফুটেজ দেখলে বুঝা যাবে। আমি গিয়েছিলাম যেন ঘটনা বড় না হয়, আমি এসব উস্কে দেইনি।
আর শেকৃবি প্রক্টর দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত করেছি, ফুটেজ দেখে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।