সার্বিয়ার পার্লামেন্টে গতকাল এক উত্তাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যেন দেশটির রাজনৈতিক আবহাওয়া এক ভীষণ গরম তুফানে পরিণত হয়েছে। অধিবেশন চলাকালীন বিরোধী দলের সদস্যরা আচমকা স্মোক গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে আক্রমণ চালায়। ভেতরে তখন ধোঁয়ার মেঘে ঢেকে গিয়েছিল পুরো পার্লামেন্ট, আর এই ঘটনার ফলে তিনজন এমপি আহত হন। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এবং শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানাতে এমন হামলা চালানো হয়—একদিকে ক্ষমতার প্রতি বিরোধী দলের ক্ষোভ, অন্যদিকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক বিশাল প্রতিবাদের জোয়ার।
রাজনীতিবিদরা যখন একে অপরের সঙ্গে কড়া বিতর্কে লিপ্ত ছিলেন, তখন দেশের নাগরিকদের আরেকটি দৃশ্যও লাইভ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হচ্ছিল—রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষ, ছাত্র বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে কাঁদানে গ্যাসের বৃষ্টি। যেন পুরো সার্বিয়া জুড়ে এক অগ্নিমূক্ত প্রলয়ের সৃষ্টি হয়েছে, যা গত চার মাস ধরে দেশটিকে উত্তপ্ত করে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী মিলোস ভুসেভিচের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আর সাধারণ মানুষ এক যোগে আন্দোলন শুরু করে, যা রেলস্টেশনের ছাদ ধসে ১৫ জনের মৃত্যুর পর আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
এই আন্দোলন বর্তমানে সার্বিয়ার সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পার্লামেন্টে তুমুল হট্টগোল চলাকালীন, স্পিকার আনা ব্রনাবিচ জানিয়েছেন, দুই আইনপ্রণেতা আহত হয়েছেন এবং এক এমপি, জাসমিনা ওব্রাদোভিচ, স্ট্রোক করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন। এই তিক্ত ঘটনার মধ্যেও তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, পার্লামেন্টের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং সার্বিয়া সুরক্ষিত থাকবে।
পার্লামেন্টের মেঝেতে ঝুলানো একটি ব্যানারে লেখা ছিল, “সার্বিয়া শাসনব্যবস্থার পতনের জন্য জেগে উঠছে।” ক্ষমতাসীন জোট যখন তাদের আলোচনায় ব্যস্ত, তখন বিরোধী দলীয় এমপিরা নানা প্রতিবাদের মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন—শিস বাজানো, শিঙা বাজানো, এমনকি ‘সাধারণ ধর্মঘট’ এবং ‘হত্যার জন্য ন্যায়বিচার’ লেখা সাইনবোর্ড উঁচিয়ে ধরেছিলেন। এই অস্থির পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যখন ক্ষমতাসীন প্রগ্রেসিভ পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট তাদের কর্মপরিকল্পনা উত্থাপন করে, যা অবিলম্বে অনুমোদন পায়। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বিরোধী দলের সদস্যরা—তারা নিজের আসন ছেড়ে স্পিকারের দিকে ছুটে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে।
এমন বিশৃঙ্খলার মধ্যে, স্মোক গ্রেনেড এবং টিয়ার গ্যাস ছোড়া হলে পার্লামেন্ট ভবন মুহূর্তের মধ্যে কালো এবং গোলাপি ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। দুই সংসদ সদস্য আহত হন, এবং অশান্তির চিত্র যেন সার্বিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এর আগেও, ১৯৯০ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরুর পর থেকে একাধিক মারামারি ও পানি ছোড়ার ঘটনা ঘটেছিল, তবে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি যেন এক ভিন্ন মাত্রা গ্রহণ করেছে।
এটি শুধু একটি পার্লামেন্টের ঘটনা নয়, বরং সার্বিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য এক সংকেত—এখন এক নতুন দিশারী আন্দোলন শুরু হয়েছে।