দেশের রাজনীতি, যে প্রতিটি কোণে কোণে আলোচনার ঝড় তুলে, সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা একেবারে স্পষ্ট, তীব্র, এবং গভীর—অথবা, বলা যায়, মর্মস্পর্শী। তিনি দলের সব রাজনৈতিক নেতার উদ্দেশ্যে বললেন, “আমরা সমালোচনা করতে পারি, এবং অবশ্যই সেটা হবে বাস্তবধর্মী, কিন্তু যদি এই সমালোচনা জনগণের বাস্তব সমস্যা থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, তা হলে এই দেশের সম্ভাবনা একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে। কোন পক্ষই তা চায় না। আসুন, ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করি, চিন্তা করি, এবং সেই পথেই এগিয়ে চলি।”
এতটুকু বলেই থেমে না থেকে, তিনি আরও বললেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমালোচনা থাকবে, এটি স্বাভাবিক। কিন্তু একটাই শর্ত—সেই সমালোচনায় যেন জনগণের দাবি ও সমস্যাগুলো ভুলে না যায়, যেন সেগুলো আলোচনার বাইরে না চলে যায়। যদি এমন কিছু ঘটে, তখন দেশের সম্ভাবনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে, এবং এটা আমাদের কেউই কামনা করি না। আমাদের সবাইকে একত্র হয়ে, জনগণের সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করতে হবে—এটাই আসল লক্ষ্য।”
এখানে থামলেন না, তারেক রহমান। তিনি আরও বললেন, “যদি বিএনপি দায়িত্ব পায়, তবে আমরা জনগণের চাহিদা অনুযায়ী উন্নয়ন, সংস্কার, এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” দেশের পরিবর্তন এবং সংস্কারের বিষয়ে, তিনি সুস্পষ্টভাবে মন্তব্য করলেন, “এ নির্বাচন বা সংস্কারের কথা নয়, আমাদের উচিত স্বাস্থ্য, বাজার ব্যবস্থা, এবং নিত্যপণ্যের দাম নিয়েও আলোচনা করা—এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও গভীরভাবে ভাবা উচিত।” প্রশ্ন করলেন, “কেন রাজনৈতিক দলগুলো বিতর্ক করছে না, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য—এগুলো নিয়ে কেন আমরা একটি বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু করছি না?”
তারপর, নিজস্ব সংস্কার প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করতে গিয়ে, তারেক রহমান বলেন, “নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে, দেশের জনগণ এখন তীব্র কষ্টে ভুগছে। তাহলে কেন রাজনৈতিক দলগুলো এগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করছে না? কেন আমরা এই সমস্যাগুলো নিয়ে একটি কার্যকরী পন্থা খুঁজে বের করছি না, যাতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পারি? কীভাবে উৎপাদন বাড়ানো যাবে, কীভাবে বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?” এর পরেই, তারেক রহমান তার সংস্কারের বিশাল ফ্রেমওয়ার্ক তুলে ধরেন, যা ৮টি মূল পয়েন্টে বিভক্ত:
১. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ: “এ দেশের জনগণ যখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে কষ্ট পাচ্ছে, তখন কেন রাজনৈতিক দলগুলো এগুলো নিয়ে আলোচনায় বসছে না? কেন আলোচনা শুরু হচ্ছে না, যেন আমরা জানি কীভাবে এগুলো মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে পারি?”
২. স্বাস্থ্য ব্যবস্থা: “এটা কেবল স্বাস্থ্য নয়, এটা আমাদের ২০ কোটি মানুষের জীবনযাত্রা। যদি আমরা সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে না পারি, দেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে?”
৩. শিক্ষা ব্যবস্থা: “এ দেশের শিশুদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সঠিক শিক্ষাব্যবস্থার ওপর। যদি আমরা সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি না করতে পারি, দেশের উন্নতি কেমন হবে?”
৪. কৃষি উৎপাদন: “দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি না হলে, আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব না। কৃষির উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের ভাবনা নিয়ে ভাবতে হবে।”
৫. শিল্প নির্মাণ: “শিল্প গড়তে না পারলে আমরা উন্নয়ন লাভ করতে পারব না। কীভাবে আমরা শিল্প গড়ে তুলব এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করব?”
৬. পরিবেশ দূষণ: “পরিবেশ দূষণের কারণে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কীভাবে আমরা এই দূষণ থেকে জাতিকে রক্ষা করতে পারি?”
৭. পানি সরবরাহ: “আমরা কি দেশের ২০ কোটি মানুষের জন্য নিরাপদ এবং সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পারছি? এটি কি সংস্কারের অংশ নয়?”
৮. জ্বালানি চাহিদা: “জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে সংস্কারের চিন্তা করতে হবে। কীভাবে এই চাহিদা পূরণ করব?”
তারেক রহমান আরও বলেন, “আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন মতাদর্শের বিভেদ থাকতে পারে, কিন্তু গণতন্ত্র এবং মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের মধ্যে ঐক্যমত্য রয়েছে। সারা দেশে প্রায় সব দল মিলে ৩১ দফা প্রণয়ন করেছিল, যখন সংস্কারের কথা বলা খুব কম লোকই শুরু করেছিল। আমরা এ কথা বলেছি, স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে। আমরা জনগণকে ঘিরে রাজনীতি করি, এবং রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো জনগণের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা এবং সমাধান খুঁজে বের করা।”
এভাবে, তারেক রহমান দেশের রাজনীতির আকাশে এক নতুন আলোচনার সূচনা করলেন, যা হয়তো দেশের ভবিষ্যত এবং জনগণের কল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।