মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর নির্মম অত্যাচার ও গণহত্যার শিকার হয়ে তারা বিতাড়িত হয়েছিল রাখাইন রাজ্য থেকে। এখন, সেই ভয়াবহ স্মৃতি ভুলে না গিয়ে, তারা গভীর জঙ্গলে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, যেন আবারও তাদের মাতৃভূমিতে পা রাখতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) প্রকাশিত দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মোহাম্মদ আয়াস নামের এক রোহিঙ্গা যুবক জানাচ্ছেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারির এক ভোরে কক্সবাজারের বিশাল শরণার্থী শিবির থেকে বেরিয়ে তিনি প্রবেশ করেন গভীর জঙ্গলে। সেই স্থান, যেখানে ২০১৭ সালে তিনি পালিয়ে এসেছিলেন, এবার ফিরে গেছেন অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিতে—মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, যারা তার সম্প্রদায়ের রক্তাক্ত নির্বাসনের জন্য দায়ী।
২৫ বছর বয়সী আয়াস, যিনি রোহিঙ্গা শিবিরে শিশুদের বার্মিজ ভাষা শেখান, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন, “আমরা প্রস্তুত। আমার সম্প্রদায়ের জন্য আমি মরতেও রাজি আছি। মাতৃভূমি, আমাদের অধিকার এবং স্বাধীনতা ফিরে পেতে এই লড়াইয়ে আমার কী হবে, তা নিয়ে আমি ভাবি না।”
শরণার্থী ও সহায়তা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, আয়াসের মতো শত শত রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় সশস্ত্র গ্রুপে যোগ দিচ্ছেন। কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত নিপীড়িত মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি, যারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন।
দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট কক্সবাজার শিবিরের এক কমান্ডারের সাথেও কথা বলেছে। তিনি জানান, রোহিঙ্গারা সপ্তাহ বা মাসের জন্য গোপনে মিয়ানমারে গিয়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তারা সামরিক জান্তা এবং তাদের বিরোধী বিদ্রোহী গ্রুপের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
রোহিঙ্গা গ্রুপগুলো দাবি করছে, ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে উভয় পক্ষই তাদের গণহত্যা ও জোরপূর্বক সেনাদলে ভর্তি করছে। এক রোহিঙ্গা যোদ্ধা বলেন, “অং সান সু চি যদি ক্ষমতায় ফিরেন, পরিস্থিতি বদলাতে পারে—তবে তারা আর অপেক্ষা করতে রাজি নন।”
আয়াস জানান, তিনি ছয় মাস জঙ্গলে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রতিদিন তাঁবু বদলিয়ে সেনাবাহিনীর চোখ এড়াতে তারা চেষ্টা করতেন। ভোর থেকে শুরু হতো প্রশিক্ষণ। গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কেউ অস্ত্রচালনা, মার্শাল আর্ট শিখতেন, আবার কেউ সামাজিক যোগাযোগ, গোয়েন্দা কার্যক্রম বা শত্রুর গতিবিধি ট্র্যাক করায় প্রশিক্ষণ নিতেন।
এভাবে, রোহিঙ্গাদের এই সংগ্রাম শুধু তাদের মাতৃভূমি ফিরে পাওয়ার জন্য নয়, বরং তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যও। তাদের এই লড়াই, একদিকে যেমন স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে তেমনই একটি জাতির আত্মমর্যাদার পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম।