ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ওমানে অনুষ্ঠিত ‘গঠনমূলক’ আলোচনা যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে। উভয় পক্ষই পুনরায় বৈঠকে বসার বিষয়ে সম্মত হয়েছে, তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সতর্কবার্তা ছিল স্পষ্ট—যদি সমঝোতায় পৌঁছানো না যায়, তাহলে সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। মাসকাটে অনুষ্ঠিত এই উচ্চস্তরের আলোচনায় ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছেন। শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি মুখোমুখি বৈঠকের আহ্বান জানালেও, শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষ কয়েক মিনিটের জন্য সরাসরি কথা বলার সুযোগ পায়। ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আলোচনা ছিল ‘গঠনমূলক ও পারস্পরিক সম্মানপূর্ণ’, তবে আলোচনা পদ্ধতি নিয়ে মতবিরোধ স্পষ্ট করে যে, এই দুই দীর্ঘদিনের বৈরী রাষ্ট্রের মধ্যে একটি নতুন পরমাণু চুক্তি অর্জন কতটা কঠিন। ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক চুক্তির অন্যতম রূপকার ও অভিজ্ঞ কূটনীতিক আব্বাস আরাগচি ইরানি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন, আর মার্কিন দলের নেতৃত্বে ছিলেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী স্টিভ উইটকফ। আরাগচি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো সমতাভিত্তিক অবস্থান থেকে একটি ন্যায্য ও সম্মানজনক চুক্তিতে পৌঁছানো।’ ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাঈল বাকায়ি জানান, এই আলোচনা ‘শুধুমাত্র একটি সূচনা’। তিনি বলেন, দুই পক্ষই আলাদা কক্ষে ছিলেন এবং ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে নিজেদের মতামত ও অবস্থান আদান-প্রদান করেছেন। ইরান, যা ইসরায়েলের মিত্রদের ওপর আক্রমণের কারণে চাপের মধ্যে রয়েছে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি চায়। ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ কৌশল এবং সামরিক হুমকির মধ্যেও ইরান আলোচনায় অংশ নিয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র তেহরান যাতে কখনও পরমাণু অস্ত্রের কাছাকাছিও না পৌঁছাতে পারে তা নিশ্চিত করতে ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। মাসকাটের বিলাসবহুল হোটেলে অনুষ্ঠিত এই গোপন বৈঠকের দৃশ্যমান চিহ্ন ছিল না—কোনো পতাকা, বাড়তি নিরাপত্তা, এমনকি রাস্তাও ছিল শান্ত। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উইটকফ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক অবস্থান হলো—ইরানকে তার পুরো পরমাণু কর্মসূচি বাতিল করতে হবে। তবে তিনি যোগ করেন, ‘এর মানে এই নয় যে, সীমান্তবর্তী কিছু জায়গায় আমরা সমঝোতার পথ খুঁজে বের করব না।’ আলোচনার খবরটি আসে এক চমকপ্রদ ঘোষণার পর, যেখানে হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চাই ইরান একটি দারুণ, সুখী দেশ হোক। কিন্তু তারা পরমাণু অস্ত্র রাখতে পারবে না।’ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা আলি শামখানি বলেন, ‘আমরা একটি বাস্তবসম্মত ও ন্যায্য সমঝোতা চাই।’ দীর্ঘদিন কূটনৈতিক সম্পর্কহীন দুই দেশের এই সংযোগ এমন সময় হলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে একাধিকবার সামরিক হুমকি এসেছে। আলোচনা ব্যর্থ হলে কী হবে—জিজ্ঞাসায় বুধবার ট্রাম্প বলেন, ‘যদি সামরিক পদক্ষেপ লাগে, আমরা সেটাই করব।’ ২০১৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী ইরানের জন্য পারমাণবিক বোমা তৈরি প্রায় অসম্ভব করে তোলা হয়েছিল, তবে বেসামরিক ক্ষেত্রে পরমাণু কর্মসূচি চালানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরান তাদের কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান বর্তমানে ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের প্রায় ২৭৪.৮ কেজি মজুত রেখেছে—যা ৯০ শতাংশ অস্ত্র মানের ইউরেনিয়ামের কাছাকাছি।